-->

আল কোরআনের কাব্যানুবাদ (১৩ নং ছূরা রাদ) -আলহাজ্জ্ব প্রফেসর মনসুর উর রহমান



আল কোরআনের কাব্যানুবাদ করেছেন আলহাজ্জ্ব প্রফেসর মনসুর উর রহমান



১৩ নং ছূরা রাদ(বজ্রধ্বনি বা বজ্র ফেরেশতা ) 

[ আয়াত: ৪৩ , রুকু: ৬ , অবতীর্ন: মদিনায় ]


কৃপালু দয়াল আল্লাহর নামে আরম্ভ প্রথম ।
                                   
১. আলিফ - লাম -মীম - রা ।
          আল কোরআনের  এ সব নিদর্শন ,
আর তোমার প্রভুর পক্ষ হতে
যা কিছু অবতীর্ন তোমার কাছে ,
সত্য সে সব ।
অথচ অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না তাতে।

২. উর্ধস্থিত করেছেন আল্লাহ আকাশ মন্ডলী স্তম্ভ ব্যতিরিকে ,
তোমরা যা প্রত্যক্ষ করো।
তারপর অধিষ্ঠিত হলেন তিনি আরশ সিংহাসনে ,
কর্মরত করালেন সূর্য চন্দ্রকে ,
আবর্তিত হয় তারা নির্দিষ্ট সময়কালে।
কর্মবিধাতা তিনি সকল কাজের।
প্রমান রাজির তিনি বিশদ ব্যাখ্যাকারী ,
তোমরা যাতে স্থির প্রত্যয়ী হতে পারো 
তোমাদের প্রভুর সাথে তোমাদের সাক্ষাতের।
                                                                       
৩. ভূপৃষ্ট প্রসারিত করেছেন তিনিই ,
সৃষ্টি করেছেন তাতে পর্বত নদনদী ,
 আর ফলাদি যত প্রত্যেক শ্রেনীতে জোড়ায় জোড়ায়্
রাত্রি দিয়ে আবরিত করেছেণ দিন ,
কার্যত নমুনা রয়েচে এতে ভাবুক জাতির।
৪. সংলংঘœ ভূখন্ড রয়েছে একই ভূতলে ,
আছে যাতে আংগুর কানন , শষ্য ক্ষেত আর
এক বা একাধিক শীর্ষধারী খর্জুর বৃক্ষগুলো ,
একই বারি সিঞ্চিত হয় যাদের শিকড়ে ,
অথচ সে সবের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি
এক ফল হতে অন্য ফলের।
এতে রয়েছে প্রামান ধীমান জাতির।

৫. বিস্মিত হও যদি , তাদের কথা আরো বিস্ময়ের ,
উক্তি তাদের ঃ নি:শেষ মিশে গেলে এই মৃত্তিকায় ,
আবার কি জন্ম নেবো নবতর রূপে ?
এরা সেই জন , যারা অস্বীকার করেছে প্রভুকে তাদের ,
লৌহ শৃংখল রবে এদের গন্ডদেশে ,
 দাজখ নিবাসী এরাই চিরস্থায়ীভাবে।

১. কল্যানের পূর্বে তোমাকে তারা
ত্বরান্বিত করতে বলে অকল্যান ,
যদিও পূর্বে তাদের  শাস্তির দৃষ্টান্ত অনেক হয়েছে অতীত।
বস্তুত তাদের অনাচার সত্বেও
মানুষের দোষ ক্ষমাকারী তোমার প্রভু।
তবে এও নিশ্চিত ,
দন্ড প্রদানে তোমার প্রভু ভয়াল কঠোর।


২. অবিশ্বাসীরা বলে :
মুহাম্মাদের কাছে অবতীর্ন হয় না কেন
 কোন নিদর্শন (মজেজা) তার প্রভুর পক্ষ হতে ?
 ( হে মুহাম্মদ ) , তুমি তো কেবল সতর্ককারী।
 প্রত্যেক জাতির রয়েছে একেক পথ প্রদর্শক।
 (২)
 ৮. প্রতি রমনী বহন করে যাকিছু গর্ভাধারে তার
আর কমা -বাড়া যাকিছু তার জরায়ুতে ঘটে ,
সব কিছু আল্লাহ সবিশেষ জ্ঞাত।
তাঁর দলিলে রয়েছে প্রতিটি জিনিষ এক নির্ধারিত পরিমানে।

৯. অদৃশ্য দৃশ্য সবকিছু অবগত তিনি ,
সুমহান তিনি সমুন্নত মর্যাদাধারী।
                              
৯. অদৃশ্য দৃশ্য সবকিছু অবগত তিনি ঃ
    আল্লাহর রাছুল (ছা:) বলেছেন ঃ অদৃশ্যের পাঁচটি জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো জানা নেই। (১) ভবিষ্যতের খবর (২) মাতৃজরায়ুতে  হ্রাসবৃদ্ধির খবর (৩) বৃষ্টির খবর (৪)মৃত্যুর খবর Ñ কোথায় কখন হবে (৫)কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার খবর। হজরত ইবনে ওমার (রা:)
হতে বর্নিত। (বুখারী ও মুসলিম )

১০.      তোমাদের যারা কথা গোপনে রাখে ,
আর তা প্রকাশ করে ,
আর রজনীতে নিজেকে লুকায় ,
আর বিচরন করে যারা দিবালোকে ,
জ্ঞানগোচর তারা সবাই আল্লাহর কাছে।

১১.      প্রতি মানুষের আগে পিছে থাকে
বদলি নিয়মে ফেরেশতা প্রহরী ,
হেফাজত করে আল্লাহর নির্দেশে।
অবস্থার বদল করেন না তিনি কোনই জাতির ,
যাবৎ সে জাতি নিজেই না করে নিজের অবস্থা বদল।
অশুভ কামনা করেন যদি কোন গোত্রের ,
তাকে রদ করে দিতে পারে  না তো কেউ ,
আর তিনি ছাড়া সহায়ক কেউ নেই যে তাদের।

১২.      বিদ্যুৎ প্রত্যক্ষ করান তিনিই ,
যাতে থাকে তোমাদের ভয়ভীতি আর আশা -আশ্বাস।
সৃষ্টি করেন তিনি বৃষ্টিভরা ঘন মেঘমালা।

১৩.      বজ্রধ্বনি আর ফেরেশতারা
সভয়ে করে তাঁর পবিত্র মহিমা ঘোষনা।
বজ্রপাত ঘটান তিনি ,যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে করেন আঘাত।
তবুও তারা বিতর্কে মাতে আল্লাহকে নিয়ে ,
            অথচ তিনি মহাশক্তিধর।

১৪.      সত্যের ডাক তাঁরই পক্ষ হতে ,
            তাঁকে ছাড়া যারা অন্যকে ডাকে ,
            কোনই প্রত্যুত্তর দেয় না তারা।
            তাদের প্রার্থনা যেমন Ñ
            পিপাসিত কোন জন প্রসারিত করে হাত এ আশাতে
            এসে যাবে মুখে তার পানীয় জল ,
            যা তার মুখে কোনদিন পৌঁছবার নয়।
            অস্বীকারকারীদের আহ্বান নিস্ফল হয়ে যায়।

১৫.               আকাশ ভূমন্ডলে যাকিছু বিদ্যমান ,
তাদের প্রতিচ্ছায়া সহ
                                                ইচ্ছা অনিচ্ছায় আল্লাহর উদ্দেশ্যে
                                                অবনত শির তারা সন্ধা প্রত্যুষে।

১৬.               তাদেরকে বলো ঃ
মহাকাশ পৃথিবীতে কে আছে পালক ?
বলে দাও তুমি ঃ তিনি আল্লাহ।
তাদের কে বলো ঃ
তবে কি তোমরা আল্লাহ ভিন্ন অন্য সহায়ক করেছো গ্রহন ?
অক্ষম যারা নিজেদের লাভ ক্ষতি সাধনে ?
আরো বলে দাও ঃ
চক্ষুহীন আর চক্ষুষ্মান তার কি সমান ?
অথবা আলো আর অন্ধকার ?
নাকি তারা এমন অংশী আল্লাহর করেছে গ্রহন
যারা তাঁর সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করেছে কিছু ?
আর তাদের সে সৃষ্টি তাদের ভেতর ঘটিয়েছে বিভ্রান্তি জাল ?
বলে দাও তাদের ঃ আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা সবার ,
অদ্বিতীয় মহাপরাক্রান্ত তিনি।

১৭.               আকাশ হতে জলধারা বর্ষান তিনি ,
প্লাবিত হয়ে যায় উপত্যকাগুলো স্বীয় পরিমান মত।
তারপর সেই স্রোতধারা বয়ে নিয়ে যায় ভাসমান আবর্জনাগুলো।
যেমন অলংকার তৈজস নির্মানে
অগ্নোৎতপ্ত পদার্থ হতে অনুরপে আবর্জনা বের হয়ে আসে।
আর এভাবেই সত্য অসত্যের উপমা আল্লাহ করেন প্রদান।
পরিত্যক্ত আবর্জনা যা আসে মানুষের কল্যানে
আর তা থেকে যায় মাটির ভেতরে ,
এভাবেই দৃষ্টান্ত আল্লাহ করেন প্রদান।

১৮.               তাদের প্রভুর আহ্বানে যারা সাড়া দিয়ে থাকে  ,
তাদের জন্য রয়েছে কল্যান।
আর সাড়া দেয় না যারা ,
তাদের জন্য এত অকল্যান ,
যার বিনিময়ে এ পৃথিবীতে যা কিছু সম্পদ রয়েছে তাদের ,
তার সাথে আরো সমপরিমান সম্পদ থাকে যদি
মুক্তিপন রূপে দিতে স্বীকৃত হবে।
তাদের হিসাব হবে কঠোর কঠিন ,
অগ্নি গহ্বর হবে তাদের নিবাস ,
সে নিবাস কত মন্দতর !
                                                            (৩)
                                    ১৯.       তোমার প্রভুর অবতীর্ন যা কিছু তোমার কাছে ,
                                                তাকে সত্য বলে জানে যে জন ,
                                                সে কি সমতুল্য অন্ধজনের ?
                                                কার্যত উপদেশ নেয় ধীমান যারা।
           
   ২০ .     আল্লাহর সাথে কৃত অংগিকার পূর্ন করে যারা ,
আর ভংগ করে না অংগিকার ,

    ২১.     আর অক্ষুন্ন রাখে সম্পর্ক বন্ধন,
আল্লাহর নির্দেশিত যা অক্ষুন্ন রাখার ,
ভয় করে প্রভুকে তাদের ,ভয় করে কঠোর হিসাব।

২২.      ধৈর্য ধরে যারা তাদের প্রভুর সন্তষ্টি অর্জনে ,
নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ,
আর যা কিছু জীবিকা দিয়েছি তাদের  ,
তা হতে প্রকাশ্যে গোপনে ব্যয় করে থাকে ,
যারা মঙ্গল দিয়ে অসঙ্গল দূর করে থাকে .
তাদের সবার জন্য শুভ পারনাম।

২৩.              চিরস্থায়ী স্বর্গোদ্যান ,তাতে ঢুকে যাবে তারা
তাদের সৎকর্মশীল মাতাপিতা দম্পতি
আর সুসন্তানাদি সহ ,
প্রতি দ্বারপথে সমাগত হবে ফেরেশতারা
তাদের সন্নিধানে।
           
২৪.              তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হবে ঃ
শান্তি বার্ষত হোক তোমাদের উপর ,
ধৈর্য ধারন করেছো বলে (প্রভুর সন্তষ্টি অর্জনে)
কত না শুভ এ পারনাম (পরজগতে)!

২৫.              বাঁধা পড়ে যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অংগিকারে ,
তারপর ভংগ করে সে অংগিকার ,
আর ছিন্ন করে যারা আল্লাহর নির্দেশিত বন্ধন
যা অক্ষুন্ন রাখার ,
পৃথিবীতে যারা ছড়ায় বিবাদ ,
তাদের জন্য ঘৃন্য অভিশাপ ,
(পরজীবনে ) তাদের জন্য রয়েছে মন্দ আবাস।

২৬.              ইচ্ছানুসারে প্রসারিত করেন জীবিকা কারো ,
আবার হ্রাস করে দেন ইচ্ছা হলে তাঁর ।
            তবুও মানুষ ইহজীবনে কত উল্লসিত !
            অথচ পার্থিব জ[ীবন কত ক্ষনস্থায়ী পরজীবনের কাছে !
 (৪)
২৭.       অবিশ্বাসীদের উক্তি  হলো ঃ
            অবতীর্ন হয়না কেন তার (মুহাম্মদের )কাছে
            ঐশী নিদর্শন তার প্রভুর পক্ষ হতে ?
            তাদেরকে বলো ঃ যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন ,
            সুপথে আনেন তাকে , নিবিষ্ট যেজন তাঁর অভিমুখী।

২৮.       বিশ্বাসী যারা , আল্লাহর স্মরনে প্রশান্ত হয় তাদের অন্তর।
জেনে রেখো ,চিত্ত প্রশান্ত হয় শুধু আল্লাহর স্মরনে।

                                    ২৯        প্রশান্ত জীবন আর শুভ পরিনাম তাদের ,
বিশ্বাসী আর সৎকর্মকারী যারা।

৩০.      (বিগত দিনের মত) এভাবেই তোমাকে করেছি প্রেরন
এক এক জনগোষ্ঠির কাছে ,
যাদের পূর্বে  বহু জনগোষ্ঠি গত হয়ে গেছে।
তাদের কাছে আবৃত্তি করবে বলে
তোমার কাছে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছি আমি।
তবুও অমান্য করে দয়ালুকে তারা ,
তাদেরকে বলো ঃ তিনি যে পালক আমার ,
তিনি ছাড়া নেই অন্য উপাস্য কোন ,
তারই উপর আমি নির্ভর কারি ,
তারই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন।

৩১.        যদি কোরআন এমন হতো ,
যা দিয়ে পাহাড় সরানো যেতো ,
আর বিদীর্ন করা যেতো এই পৃথিবীকে ,
অথবা বাক্যালাপ করা যেতো মৃতদের সাথে ,
তবুও তারা বিশ্বাসী হতো না তাতে।
অথচ সবকিছু আল্লাহর অধিকারে ।
তবুও কি প্রত্যয়ী নয় বিশ্বাসী যারা ,
সবাইকে সৎপথে চালাতে পারেন আল্লাহ ইচ্ছা হলে তাঁর ?
                                                অবিশ্বাসীদের কর্মফলে ইহজীবনে ঘটে যেতে থাকে
                                                তাদের বিপর্যয়।
                                                অথবা আপতিত হতে থাকে দুর্যোগ তাদের গৃহ নিবাসের কাছে ,
                                                যাবৎ না এসে যায় আল্লাহর প্রতিশ্রুত দন্ড ,
                                                কখনো ভংগ করেন না আল্লাহ অংগিকার।
                        ---------------------------------------------------------------------------------
২৭.অবতীর্ন হয়না কেন তার কাছে ঐশী নিদর্শন যুগে যুগে যত নাবী রাছুল পৃথিবীতে এসেছেন , তাদের সে যুগের তাদের গোত্রের কাফের মুশরিক মুনাফিকরা তাদেরকে নানাভাবে জ্বালাতন করেছে। যেমন তারা তাদের কাছে নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটাবার বা অলৌকিক কোন জিনিষ এনে দেয়ার দাবী তুলেছে। এমন কি আল্লাহকে নিজ চোখে চাক্ষুষ অবয়বে দেখবার আবদার করেছে। তারা অংগিকার করতো তারা ঈমান আনবে। আল্লাহ পাক নাবী রাছুলদের মাজেজা প্রদান করে সে দাবী পূরন করতেন।কিন্তু কাফেরা তাতে ঈমান আনতো না। শেষ রাছূল হজরত (ছা:)এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আবু লাহাব আবু জেহেল ও ওতবা প্রমুখ কাফেররা প্রায়শ রাছূল (ছা:) এর কাছে অরৌকিক ঘটন্ ঘটানোর দাবী জানাতো। এ রকম একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে গিয়ে তিনি চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে দেখিয়েছিলেন। তবুও কাফেরেরা ঈমান আনেনি।
আল্লাহর শর্ত থাকতো কোন নাবী রাছূলের দ্বারা মজেজা প্রকাশের পর যদি কাফেরেরা ঈমান না আনে তবে ভয়াবহ আল্লাহর গজব নেমে আসবে। এ রকম আল্লাহর গজবে বহু নাফরমান
কাফের সম্প্রদায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। আদ সামুদ লুত নূহ সম্প্রদায় তার দৃষ্টান্ত। হজরত মুহাম্মদ (ছা:)এর চাঁদ দ্বিখন্ডিত করার মজেজা প্রকাশের পরও কাফেররা ঈমান আনেনি। ফলে মক্কায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো , যা দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলে। অবশেষে রাছূল (ছা:) এর প্রার্থনার ফলে তা দূর হয়। একবার মক্কার কাফেররা দাবী তুললোÑ যদি মুহাম্মদ (ছা:) ছাফা পাহা কে সোনায় পরিনত করে দিতে পারে ,ঊষর মক্কাভূি তে যদি নদী প্রবাহিত করে দিতে পারে এবং মক্কার সব পাহাড় সরিয়ে চাষাবাদের সমতল ভূমি তৈরি করে দিতে পারে , তাহলে তারা ঈমান আনবে। আল্লাহ পাক হজরত জীবরিল (আ:) মারফৎ অহী প্রেরন করে জানালেন Ñ হে মুহাম্মদ (ছা:) ! তুমি এ ব্যাপারে প্রার্থনা করো না। প্রার্থনা জানালে সবকিছু পূরন হবে। ওরা ঈমান আনবে না । এরপর ভয়াবহ আজাব নেমে আসবে যা এ যাবত কোথাও আসেনি। তুমি এটা চাও না তাদের জন্য তাওবা করার পথ খোলা থাকুক এটা চাও ? সৎপথ প্রদর্শনের ক্ষমত একমাত্র আল্লাহর। যারা ঈমান আনবে তারা শুধু আল্লাহর বানীই
শুনে আনবে। তাদেরকে মাজেজা দেখানো হোক বা না হোক ।আর যারা ঈমান আনবে না।তাদেরকে যতই মাজেজা বা আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন দেখানো হোক না কেন। ধ্বংস বা আজাব এসে যাওয়ার পর কেউ তাওবা করঅে বা ঈমান আনলে তা কবুল হয় না।
--------------------------------------------------------------------------------
২৯. প্রশান্ত জীবন আর শুভ পরিনাম । সৎকর্মকারী ব্যক্তিদের আল্লাহর কাছে পুরষ্কার ও প্রতিদান কল্যানময় প্রশান্ত জীবন। এ সব মানুষের পরিনাম অত্যন্ত শুভ। ঈমানদার যারা সৎকর্মকারী , যাদের অন্তরে ঈমান খুবই মজবুত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ,তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটা তাদের জন্য এ বড় নকমের মানসিক প্রশান্তি। তাছাড়া সত্যিকার আল্লাহর জিকর বা ইবাদত বান্দার মনে নির্মল আনন্দ বা প্রশান্তি বয়ে আনে। এ সব বান্দারাই চিরস্থায়ী আবাস বা বেহেশত লাভ করবে। এটা তাদের জন্য মহাপাওয়া এবং তাদের শুভ পরিনাম। তারা সেখানে অভিনন্দিত হবে। তুবা শব্দ দিয়ে আল্লাহ পাক এ সব  পুরষ্কার আর কল্যানের কথাই বলতে চেয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন ঃ তুবা অর্থ বেহেশতের জমিন। এটি একটি হাবশি শব্দ। হজরত সুদ্দী (রা:) এর মতে তুবা হলো বেহেশতের বাগান।হজরত সাঈদ খুদরি (রা:) বলেছন ঃ তুবা হলো বেহেশতের গাছ। হজরত রাছূল (ছা:) বলেছেন ঃ তুবা একটি বেশেতের গাছ , যার পরিধি একশ বছরের পথ । যার ছায়া একশ বছর চললেও শেষ হবে না। বেশেতের পোষাক এ গাছ থেকেই আসে। হজরত ছাহল ইবনে ছা’দ থেকে বর্নিত Ñ বুখারি ও মুছলিম। তুবা একটি চিরস্থায়ী জান্নাতী গাছ , যাতে রয়েছে সোনার ফড়িং ও বড় বড় ফল Ñ তিরমিজি। আবু হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত Ñআল্লাহর আদেশে তুবা গাছ বেহেশতে বান্দার জন্য চাহিদা মোতাবেক সব উত্তম জিনিষ সমূহ সরবরাহ করবে। যেমন  উত্তম উঁট , উত্তম ঘোড়া ও উত্তম ফলমুল। বেহেশতীদেরকে তুবা গাছের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এ গাছটির বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন রং হবে । যেমন কালো সবুজ হলুদ লাল সাদা ইত্যাদি। বেহেশবাসীরা পছন্দমত রং এর এক একটি শাখা বেছে নিতে পারবে।Ñ আবু উমামা আল বাহিলী (রা:)।

                                    ৩২.      বিদ্রুপ বিদ্ধ হয়েছেন তোমার পূর্ববর্তী অনেক রাছূল।
            কার্যত অবিশ্বাসী যারা , দিয়েছিলাম তাদের কিছু অবকাশ।
            তারপর বেঁধে নিলাম শাস্তির বেড়াজালে ,
            কিরূপ (ভয়াল) ছিলো সে দন্ড আমার !

৩৩.        প্রত্যেকের কৃতকাজ অবগত যিনি ,
তিনি কি সমকক্ষ তাঁর শরিকের সাথে ?
      অথচ আল্লাহর অসংখ্য অংশীদার বানিয়েছে তারা ।
      তাদেরকে বলো ঃ দাও তাদের নাম পারচয়।
      তবে কি তোমরা পৃথিবীর অথবা তোমাদের
                                                সারশূন্য বক্তব্য হতে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও তাঁকে
                                                যা তিনি অবগত নন ?
                                                অথচ অবিশ্বাসীদের শঠতা শোভনীয় তাদের নিজেদের কাছে।
                                                নিবৃত তারা সৎপথ হতে।
বস্তুত আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন যাকে ,
নেই তার কোন পথ প্রদর্শক।

৩৪.        পার্থিব জীবনে তাদের শাস্তি ঘোরতর ,
পর জীবনের শাস্তি ভয়ংকর আরো  ,
নেই কেউ রক্ষাকারী আল্লাহর দন্ড হতে।

৩৫.        আল্লাহ ভীরুদের প্রতিশ্র“ত এরূপ উদ্যান ,
পাদদেশ দিয়ে যার নদী প্রবাহিত ,
ফলমুল আর ছায়া যার চিরস্থায়ী হবে।
                                                সৎশীলদের এ তো শুভ পরিনাম।
                                                আর অবিশ্বাসীদের পরিনাম অগ্নি গহ্বর।

৩৬.        আমি কোরআন গ্রন্থ দিয়েছি যাদের ,
আনন্দিত তারা তোমার কাছে অবতীর্ন সে গ্রন্থ্।ে
তবে কিছু দল অস্বীকার করে কিয়দ্বংশ তার।
তাদেরকে বলো ঃ আদিষ্ট হয়েছি আমি
উপাসনা করি যেন তাঁর ,
আর তাঁর সাথে না মানি কোন অংশীদার।
তাঁরই দিকে সবাইকে করি আহ্বান ,
আর তাঁরই দিকে আমার প্রত্যাবর্তন।
                                    ÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑÑ
                                    ৩৬.   আনন্দিত তারা তোমার কাছে অবতীর্ন সে গ্রন্থে।      
 যে সব আহলে কেতাব অর্থাৎ ইহুদী খৃষ্টান তাদের সঠিক গ্রন্থের অনুসরন করেছে , তারা রাছূল (ছা:) এর কাছে কোরআন অবতীর্ন হওয়াতে আনান্দত হয়েছে। কারন পূর্বেই তারা
তাদের গ্রন্থেহজরত মুহাম্মদ (ছা:) এর আগমন ও তার নাবুয়াতের সংবাদ পেয়ে গেছে। কাজেই দ্রুত তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়েছে। তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে আল্লাহর প্রতিশ্র“তি সত্য। আহলে কেতাব যারা সব জেনে শুনে ঈমান আনেনি বা ইসলাম গ্রহন করেনি তারা অমুসলিম কাফের হয়ে গেছে।

৩৭.       এভাবেই আরবী ভাষাতে অবতীর্ন করেছি একটি বিধান।
অনুগামী হও যদি তাদের প্রবৃত্তির জ্ঞানবান হয়ে ,
তাহলে রবেনা তোমার কোন সহায়ক ,
রক্ষাকারী কোন , বিপক্ষে আল্লাহর।
                        (৬)
                                    ৩৮.       বিগত পূর্বে তোমার পাঠিয়েছি অনেক রাছূল ,
আর দিয়েছি তাদের স্ত্রী সন্তানাদি।
আল্লাহর সম্মতি ছাড়া একটিও আয়াত আনার
সাধ্য নেই কোন রাছূলের।
প্রতিটি সময়ের একটি বিধান গ্রন্থ থাকে।

৩৯.      যা ইচ্ছা আল্লাহ করেন বাতিল ,
ইচ্ছা হলে রাখেন বহাল ,
রক্ষিত তাঁর কাছে মূল গ্রন্থখানি।

৪০.       যে শাস্তির অংগিকার করেছি তাদের সাথে ,
তার কিছু যদি প্রত্যক্ষ করাই তোমাকে ,
অথবা তার পূর্বে যদি তোমার মৃত্যু ঘটাই ,
আমার নির্দেশ পৌঁছানো শুধু  কর্তব্য তোমার ,         
আর হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আমার।


৩২.                    দেখে নাকি তারা
চারদিক হতে সংকুচিত করে চলেছি পৃথিবীকে ?
নির্দেশ করেন আল্লাহ ,
নেই কেউ তাঁর নির্দেশ টলাবার।
হিসাব গ্রহনে দ্রুততর তিনি।

৩৩.                    চক্রান্ত করেছিলো পূর্ববর্তীরা তাদের ,
বস্তুত সকল চক্রান্ত আয়ত্বে আল্লাহর ,
অবগত তিনি প্রত্যেকের কৃতকাজ।
সত্বর জেনে যাবে অবিশ্বাসীরা
পরজীবনে হবে কার শুভ পরিনাম !

৩৪.                    অবিশ্বাসীদের ভাষ্য এই ঃ
নও তুমি প্রেরিত পুরুষ।
তাদেরকে বলো ঃ
গ্রন্থের জ্ঞানধারীদের ও আমার আর তোমাদের মাঝে
                                                আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষ্যদাতা রূপে।

 [ ছূরা রা’দ সমাপ্ত ]

Latest posts