-->

প্রবীন সাংবাদিক এম কে টেলিভিশনের অফিসে এসে কেন কাঁদলেন


সাংবাদিক আবু তাহের এর স্মৃতিচারণ 
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সাংবাদিক আবু তাহের মৃত্যুর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে এম কে টেলিভিশনের অফিসে এসে কেন কাঁদলেন !

দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সরকারপাড়া ইসলামি
য়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষক, প্রবীন সাংবাদিক এবং লেখক, ছড়াকার, প্রবন্ধকার আবু তাহের মৃত্যুর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে এম কে টেলিভিশনের অফিসে এসে কেঁদে গেলেন 
রিং বাজলো হ্যালো আমি সাংবাদিক তাহের বলছিআপনি হাবিব সাহেব বলছেনআমাকে চিনতে পেরেছেনআমি আপনাকে খুব ভালভাবে চিনিদেখা করতে চাই আপনার অফিসে, একটু সময় দিবেনপুরাতন বাজারের কোয়েল আপনার নাম্বারটা দিলোপ্রথম দিকে কথাগুলো বলছিলেন সেই ব্যক্তিটি মৃত্যুর সংবাদ রাত১২টায় যখন পাই তখন বড় ধরণের একটা ধাক্কা পেলামঅফিস থেকে বাড়ী ফিরছিলামকিভাবে যে বাকী রাস্তা পেরিয়ে বাসায় ঢুকলাম বুঝলাম অফিসে রিং দিচ্ছি 
গভীরভাবে শোকাহত হয়ে পড়লামবারবার মনে হচ্ছিল কেন সময় নিষ্ঠুর আচরণ করলো আমার সাথেসপ্তাহখানিক আগে আমাকে রিং করে বললেন হাবিব আমি বিছানায় পড়ে গেছিআপনার ওখানে যেতে পারছিনাআপনি ব্যস্ত মানুষ তবু আপনি একবার আসবেন ? আমার বাড়ি পুরাতন বাজারে মোড়ে, যে কাউকে বললে বলে দিবে সাংবাদিক তাহেরের বাড়ী কোনটাআপনার সাথে আরো কথা আছে ক্যামেরাটা নিয়ে আসবেন কিন্তুআসবেন তোকেউ খোঁজ নেয় নামুসলিম (সাংবাদিক) এসেছিলবলেন আপনি কথন আসবেন ? 
দুর্ভাগ্য আমার যেতে যেতে পরিনিপার্বতীপুরে বাহিরে থাকা অবন্থায় ফেবুতে দেখিমুসলিম ভাই (সাংবাদিক) এর পোষ্টের ছবিতে ওনি নিথর হয়ে বিছানায় শুয়ে পাশে মুসলিম ভাইতারপর ...নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছেকি কথা আর কি বা দিতে চেয়েছিলেনকোন তথ্য বা কোন তার রচিত কোন লেখা... না কিছু চিন্তা করতে পারছিনাঅপরাধ, অপরাধএটি মারাক্তক অপরাধ হয়েছে তার কাছেতার কাছে এখন ক্ষমা চাইলেও কোন ফল নেইআসলে আমরা যেন কেমন জানিশরীরে বল আছে নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে বেড়াইএবিষয়টা আগে হতো নাএখন দেখছি দু'দিন হোক দু'যুগের হোক মৃত্যুর আগে আমাকে কিছু বলে যেতে চায় কিন্তু এযাব'জনের কথা বলে যেতে পারেন নিযেমন- মিলনদা (সংগঠক), মিনু ভাই (কণ্ঠ শিল্পী), আইয়ুব চাজী(কণ্ঠ শিল্পী), মিজান ভাই (কণ্ঠ শিল্পী) বুলবুল ভাই (শিক্ষক), জমিস ভাই (সাবেক আর্মি), এবং আজ সাংবাদিক তাহের ভাইএনারা প্রত্যেকে মৃত্যুর আগের মোবাইলে কথাটি বলেছিলন গোপন কিছু তথ্য আমাকে দিয়ে যাবেনঅথবা তাদের প্রতিভার একটা কিছু করার জন্যতাদের মধ্যে কজনের কিছু প্রতিভার নমুনা আমার কাছে জমা দিয়েছেনকিন্তু তবু শেষ সময় ওই একটাই কথা আপনার/তোমার সাথে কথা আছেএর কারণ কি ? তাদের শেষ ইচ্ছা পুরণ করতে পারিনিতাই তাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছি তেমনি সাংবাদিক তাহের ভাইয়ের শেষের কথাগুলো তুলে ধরলাম 
দেশ স্বাধীনের পর থেকে পার্বতীপুরের অবস্থা খুবেই নাজুক ছিলতখন পার্বতীপুর অঞ্চলে ক্ষমতার লড়াই চলছিলযে যত লুঠপাট, জায়গা দখল, হুমকী ধমকি ইত্যাদি করতো পারতো সে তখন সেয়ানাতাদের দাপটে ভাল কাজ করা দুস্কর ছিলএসবের প্রতিবাদ করতে তখন প্রথম সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে যে ক'জন কলম যোদ্ধা ছিলেন তাদের মধ্য অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব প্রফেসর উর রহমানতিনি পার্বতীপুরে খুঁজতে শুরু করেন কলম যোদ্ধাদেরসেই সময় যাদের মধ্যে নির্ভীক ভাবে এগিয়ে এলেন তারি ছাত্র এই প্রতিভাবান মানুষটিআবু তাহেরসেই সময় বর্তমান যারা নিজেদের কবি লেখক সাংবাদিক পরিচয় দেন তারা তখন অনেকে এই লাইনে জন্ম হয়নিআর যারা ছিলেন তারা জানতেন না কলম যোদ্ধা কাকে বলেতাইতো পার্বতীপুরে বর্তমান কোন নামকরার সৃষ্টি হচ্ছে নানা হবার কারণ হিংসা, লোভ, সেই সাথে অপকৃত্তি করাএগুলো থাকলে ভাল ফল সৃষ্টি হবে কি করেহ্যানচাই গাছ আপেল ধরে ? এখন পার্বতীপুরের গাছে গাছে সব মাকাল ফল- রাগে, ক্রদ্ধে, অনুশোচনায় বলেছিলেন আমাদের বড় ভুল হয়েছে এদের চক্ষু দান করানিজেরাই কিছু করতে পারে না অপরের পিছনে লেগে সময় নষ্টফলে কি দাঁড়িয়েছেসে নিজেও তলিয়েছে বিনিময় পার্বতীপুর ও ভাল মানুষের সন্ধান পাচ্ছে নাপার্বতীপুরে সাংবাদিকতা জগতে কিছু বদ, মুর্খরা এসে (নাম উল্লেখ করে বলেন)সব এলোমেলো করে দিয়েছেতারা কয়দিন এই অবস্থা সৃষ্টি করবেবয়স কতমেধার জোড় না থাকলে ভিক্ষারীর মত চলতে হবেস্বাধীনতার আগের পার্বতীপুর ভাল ছিলতখন বিহারীরা বাঙ্গালীদের ঘুতাতোএখন স্বাধীন হয়ে বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীদের ঘুতায়কি হলো পার্বতীপুরকোন পরিবর্তন আছেনেইএখনো বাপ বেটা আত্মীয় সজন থেকে শুরু করে নিজের লোকদের কাজের বাধা 
আমার অফিসের লম্বা টুল ওনার জন্য বসাবার আসনহাতে লাঠি ঠেস দিয়ে প্রশ্ন বোধক চিহ্নের মত করে হাতে লাঠি কেঁপে কেঁপে উপরের দিকে ঘাড় রেখে সেই নির্ভীক সাংবাদিক দরাজ কন্ঠে বলে যাচ্ছেনআমার তো জীবন শেষের দিকেআমি যদি একটু চলতে পারতাম....(কিছুক্ষণ নিরবতা, হঠা লাঠি কাঁপিয়ে) তবু লিখতে পারি, এত অনিয়ম, এত অনিয়ম এখন পার্বতীপুরের নিয়মএই অনিয়মের নিয়ম ভাঙ্গা সময় আসবেএখনকার ছেলে মেয়েরা বাহিরে পড়াশুনা করে প্রযুক্তি নিয়ে ফিরছেএই শয়তানদের তাড়াতে সময় লাগেবেতার আগে এই পার্বতীপুর বাসীর একটা সায়েস্থা হওয়া উচিতএত কিছু বুঝেও না বুঝার ভান করেঅথচ সেই তলাবিহীন স্বাধীন ঝুড়ির দেশে পার্বতীপুরের চোখ দান করে ছিলেন যারা সেদিনে বসে ছিলেন না আর যারা আজো বেঁচে আছে ঘরের ভিতরে বসেও নিজের কাজ করে যাচ্ছেনসেই রকম একজন জীবন্ত কিংবদন্তীর কথা বলিহাবিব আপনি বিরক্ত হয়েছেন না তো। ... 
সাংবাদিক তাহের আলোচনায় বলেছিলেন মনসুর স্যার এই অঞ্চলের অনেক কলম যোদ্ধা তৈরী করেছেনওনাকে না পেলে সাংবাদিক ও লেখক আবু তাহেরের জন্ম হতো নাতার যে এত স্ব-রচিত মুল্যবান বই এই অঞ্চল তো দুরের কথা দেশের প্রখ্যাত লেখকরা ও সেই সব বিষয় নিয়ে বই লেখেন নিঅথচ তাকে যারা চেনার তারা ঠিকই চেনেকিন্তু পার্বতীপুরের কজন মানুষ এখন তার স্বানিধ্য পায়না মানে আপনাকে বলছি আপনার বাবা হিসেবে না।(চা খাব) এই যে চাতে এত চিনি, চারিদিকে নেশার একটা ছোঁয়ামেধা বিকাশ হবে কি করেখেলাধুলার কোন আয়োজন নেই সাহিত্য সাংস্কৃতিক কোন আয়োজন নেইসব জায়গায় ধান্দাটাকার গন্ধ শুকে বেড়ায়অথচ সেই সময় সাংবাদিক হাতে গনা যে কজননা হায়দার সাহেবও তখন সাংবাদিকতায় সেভাবে আসেনিশামছুল (সাংবাদিক) ছিলেন আপনার বাবাযাই হোক আমরা দীক্ষ্যা নিতাম জ্ঞানীগুণী জনদের কাছেএখন তো মঞ্চে যারা উঠেন দেখে হাসি পায়তারাই এখন জ্ঞানীগুণী, অথচ একটা কিছু ভাল সৃস্টি দেখলাম নাএদের কাছে কি আশা করা যায়পার্বতীপুরে সেই সময় জ্ঞানীগুণী বলতে গেলে দেশ বরণ্য যারা তাদের মধ্যে কাফি সাহেব, (ভারত বর্ষের বিশিষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ) এক নামে সমগ্র বাংলাদেশ জানে ড. বারী, খেলোয়ারদের মধ্যে এক নামে জানতো হাজী মহিউদ্দিন, আর দেখান কে আছেআর যারা ছিলেন জমিদার বাপের জমি ছিল আর কি করবে না ভেবে রাজনীতি নাম লেখায়তবু তো মহির হাজী পার্বতীপুরে আওয়ামীলীগের জন্মদাতারাজনীতি নিয়ে আর কথা বলতে চাই নাএটার জন্য তো পার্বতীপুর নষ্ট হয়েছেকথা অন্য দিকে ঘুরে যায়কি বলছিলাম, ও হ্যা স্যার
এখন মনসুর স্যারপার্বতীপুরে শুরুতেই যেকাজেই করুক না কেন স্যারের কথা আসতে হবেনইলে ওই ব্যাটা পার্বতীপুরের নয়
পর্বতীপুরে মনসুর স্যারসহ শামছুল আমরাই প্রথম প্রেস ক্লাবের তৈরীর পরিকল্পনা করি কোথায় হবে কোন জায়গা ভাল হয়স্যার প্রস্থাব দিলেন কবি সাহিত্যিকসহ সাংবাদিকরা মিলে প্রেসক্লাব তৈরী হোককারণ প্রেসক্লাব হবে কলম যোদ্ধাদের জন্যস্যার সেই সময়ের পার্বতীপুরের প্রথমসারির একজন সাংবাদিক শুধু নয় কবি, সাহিত্যিক, কলামিষ্ট যা দেশের প্রথমসারির পত্রিকায় তিনি কাজ করতেনদৈনিক আজাদ, দৈনিক দেশ, সংবাদ ইত্যাদি পত্রিকায় যখন তার লেখা দেখতাম তখন আমার মনে দারুন ভাবে বিদ্যু চমকে যেতোতার লেখা পড়তাম মনোযোগ দিয়েপার্বতীপুরে যখন জাতীয় সংবাদপত্র প্রায় আসতই না এলে ওই পত্রিকা সাতদিন ধরে পড়তামএমন অবস্থা
তারপর অনেকে সাংবাদিক হলো লেখক হলো কিন্তু পত্রিকায় উঠতো নালিখে লিখে বস্তাবন্দী
তখন লেখা প্রকাশ হওয়াটাই খুব টাপ ছিলো
কথা প্রসংগে - আপনার ছাত্রজীবনের লেখা পড়তাম সম্ভবত ৮৮ - ৯০ এর দিকে, সালটা মনে নেই তবে বইমেলায় আপনার বই দেখে আমি নিজে চমকে গিয়েছিলামতখন থেকেই আপনাকে আমার মনে হতো কিছু একটা বিস্ফরন ঘটাবেনরংপুর বেতারে যখন আপনার কবিতা শুনেছি তখন আপনার সাথে একবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম পরে কেন জানি হয়নিআপনার কণ্ঠে যদি আমার কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেতাম ধন্য হতাম....আমার একটা কবিতা শুনবেন? 
(শুনাতেন আমি শুনতাম, একটার জায়গায় তিনটি, কখনো ৪টি কবিতা শুনাতো, মাঝে মধ্যে বিরক্ত হতামকখনো বা আধুনিক কবিতার প্যাটেন নিয়ে বলতামকারণ আমার কবিতা ওনি পছন্দ করতেন, তাই একটু মাতব্বরী করতাম, করবো না কেন? আমার কবিতা আবৃত্তি শুনে ওনি অস্থির হয়ে উঠতেন, ওনি কেন আপনি হ্যাঁ আপনি, পাঠক আপনাকেই বলছি আপনিও আমার প্রেমে পড়ে যাবেন নয়তবা গায়ের লোম শিউরে উঠবে, এটা গ্যারান্টি দিতে পারি.. হা...হা...হা.., যা বলছিলাম আর কি, তাহের ভাই আপনার কন্ঠটা আবৃত্তির করার মত।(লাফিয়ে উঠার মত) 
তাহলে আপনার টিভিতে দিয়েদেন না
আশ্বাস দিয়ে আধুনিক কবিতার নেকগুলো দেখাচ্ছিলাম মানে টিচারের উপর টিচারীগিরী করা আর কিতার লেখার শব্দ চয়নভাল কিন্তু কিছু কিছু শব্দগত ভাব আধুনিকয় করা আর কিএরি মধ্যে কতবার এই মোবাইল ফোন ডিস্টার্ভ করেততবার তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন) 
না না.., সাংবাদিকদের উপর রাগ না অভিমান আমার, 
(সাংবাদিক তাহের দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভিমান সুরে বলতে থাকেন) 
গুরুকে বা সহকর্মীকে মানুষ ভুলে যায়, তবু যদি আমি সুস্থ থাকতাম!....(দীর্ঘশ্বাস)আর তো তারা টেলিভিশন সাংবাদিক হলে কি হাল হতোআপনার কথা অনেক শুনিএখানে যে টেলিভিশন চ্যানেল হবে পার্বতীপুরবাসী কল্পনাও করতে পারেনিকিন্তু আপনি নিজের গতিতে আজ চ্যানেলটি সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়েছেনপুরাতন বাজারের কোয়েল প্রথম জানিয়েছে আপনি সে ছেলে তাইতো, আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আপনার কাছেআমি আজ অসুস্থ, চলাফিরা খুব কষ্টকর, কিন্তু আমার কাজগুলো নিয়ে ভাবছিকেউ আমার খোঁজ খবর নেয় নামাঝে মধ্যে আপনারসহ ক'জনের রিং পাই, তখন ভাল লাগেএছাড়া কোন সাংবাদিক, লেখক, কবিরা, জানতে চায়না এই পঙ্গু সাংবাদিক তাহের আছে না মরে গেছেআমি কি করিনি এই প্রেসক্লাবের জন্য, তবু অপবাদকারা এসে আজ সাংবাদিক সেজে কামড়া কামড়ি করছেজানি, জানি সব জানি কিন্তু আমার হাত এখনো চলে, আপনি আমাকে সাহায্য করেন ? কারণ পার্বতীপুরের সাংবাদিকদের আমার চেনা শেষকথা শেষ না হতেই কেঁদে ফেললেনআর ফুঁপে ফূঁপে বললেন যাদের জন্য এত কিছু করেছি, তাদের লেখা শিখিয়েছি, সাংবাদিকতা শিখিয়েছি তারও আমাকে এড়িয়ে চলেএসবো একদিন হিসেব হবে
যে কদিন অফিসে এসেছিলেন নিজে গিয়ে তাকে যতবার ভ্যান থেকে হাতধরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে তিনি ততবার হাত ছেড়ে নিয়ে বলতেন আমি নিজেই পারবোতার মনে কত শক্তি কাজ করতোতাকে এভাবে কেউ সাহায্য করুক তা তিনি চাইতেন নাঅামি অবাক হয়ে দেখতাম সেই তেজী তরুন সাংবাদিক সে কত কষ্ট করে পথ এগুচ্ছে, যতবার বলেছি আমাকে তুমি করে বলবেন, উত্তরে বারবার বলেছেন, আপনি এই লাইনে গুরু, গুরুকে আপনি সন্মোধন করলে আমি ও সম্মান বোধ করবোবিরক্তের মাঝেও অনেক কথা অবাক হয়ে শুনতামআবার মাঝে মধ্যে আমার অজান্তে কথা প্রসংগে কড়া কথাও বলতামওনি মাথা পেতে নিয়ে হাসতেনবাবার কথা তুলতেনবাবার কথা উঠলে বাবাকে রিং দিয়ে আসতে বলতামতিনি এলে দেখতাম দুবৃদ্ধ ছাত্র শিক্ষককে কত মিলঅসুস্থ্য ছাত্রের জন্য কত উতলাব্যস্ত সময়ের মাঝে সময় দিয়ে তার লেখা নিয়ে আলোচনা 
 চ্যানেলের কাজের চাপ বেশী থাকলে তিনি এলে মনে মনে রাগ হতামভাবতাম চা খাইয়ে দিয়ে বিদায় করিতা হয়ে ওঠেনি কখনোঅনেক সময় ওনার আবেগের কথা শুনতামচাকুরী নেই, শাররীক অক্ষমতায় আয়ের উস নেই, তখনি ভাবি তার জন্য কি করা যায়অবশেষে শেষ আফিসে আসার দিনে বললাম আপনার জন্য একজন ছেলে রাখবো সে কম্পোজ করবে আর আপনি বলবেনচট করে বলে বসলো (আমি হাতে লিখতে পারি।) তবে বেশ তাহলে হাতে লিখে আনবেন (নিউজ) আমি আপনার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী টিভি নিউজ বানিয়ে প্রচার করবোকথা শেষ না হলেই তার মনে আনন্দ উঁকি দিলোআর আপনার বসার ব্যবস্থা ও করছিএমন সময় মিনতি করে বললেন- আমার যাওয়া আসার ভাড়াটা যদি দিতেনআমি হেসে ফেলামকোন সমস্যা নেইএমাসটা আমি খুব ব্যস্ত থাকবোটিভি ডেস্ক তৈরীর কাজে ডেস্ক হলে আপনাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন মুলক স্বাক্ষাকার নিবোশুনে তিনি আরো খুঁশিতে আটখানা হয়ে গেলেনকিন্ত সেই খুঁশি আজ কোথায় গেলোডেস্কও তৈরী হলো তিনি ও তৈরী হয়ে অপারে চলে গেলেন
যে যাই বলুন যে কদিন আমার অফিসে এসে আমাকে বিরক্ত করেছেনবিরক্ত হয়েছি ঠিকইকিন্তু পরক্ষনেই ভেবেছি 
তিনি যে সাংবাদিকতার শান্তির বাতাস পাননি তা আমি অনুধাবন করতে পেরেছিকারণ মুল্যায়ন ছাড়া জীবন বৃথাতাই তিনি ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন প্রধান সমস্যা নিজ নিজ গোত্রের নিজেরাইতিনি শেষ সময়ে বেঁচে থাকা অবস্থায় মুল্যায়ন চাইছিলেন তারি সহকর্মীদের কাছে কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নিদেয়নি সাংবাদিকরা, দেয়নি লেখকগুষ্টিএকটা প্রতিভাবান মানুষ কতটা অসহায় হলে দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটু মুল্যায়নের জন্যযারা জানে তারাই বোঝে নিজ মুল্যায়নে মৃত্যু কত মধুর হয়কারণ কেউ চায় না সে মরে গেলে তারি গোত্রের লোকজন মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আনন্দে মুরগীর রোস্ট চাবাকসে হতভাগ্যের মৃত্যুর আনন্দে নাচতে নাচতে বলবে ওমুক মরেছে সাধারন মানুষ রেহাই পেয়েছে
এমনি করে কত সাংবাদিক তাহের, কত কন্ঠশিল্পী আইয়ুব নিরবে কেঁদে কেঁদে সারাজীবনের প্রতিভাগুলোকে গলা চিপে মেরে ফেলে সে নিজেরাই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করবে
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি সাংবাদিক তাহের, কন্ঠশিল্পী আইয়ুবসহ যারা আর্তনার্থ করতে করতে বিদায় নিয়েছেন. আমাদের বেলায় কি হবে? যারা আজ স্ব স্ব প্রতিভার আঙ্গিনায় মাস্তুল তুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত বলছেনতাদের বিবেকের কাছে একই প্রশ্ন আপনাকেও কি মৃত্যুর আগে নিজের প্রতিভার পান্ডুলিপি নিয়ে কাঁদতে হবে স্বীকৃতি পাবার জন্যআসুন সব স্বার্থকতা ভুলে নিজ নিজ গোত্রের প্রবীন প্রতিভাবদের মুল্যায়ন করি যে যার অবস্থান থেকেনইলে সবাই মিলে একত্রে সেই কাজটি করি, যা দেখে আমাদের প্রজন্ম আমাদেরকেও মাইলফলকে নাম লিখে রাখেতবেই মানব জীবন স্বার্থক হবেআবারো বলছি, নইলে মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আনন্দে মুরগীর রোস্ট চাবাবেসে হতভাগ্যের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তারা আনন্দে নাচতে নাচতে বলবে ওমুক মরেছে সাধারন মানুষ রেহাই পেয়েছে
যদি মৃত্যুর জন্য অতি সাধারন চোখের জল মাটিতে পড়ে, সেই অশ্রুজল সাগরতুল্য মুল্যায়িত করলো মৃত ব্যক্তিকে


:::::::::::::::::::::::::::::::::::
হাবিব ইফতেখার
চেয়ারম্যান
এম কে টেলিভিশন

Latest posts