প্রবীন সাংবাদিক এম কে টেলিভিশনের অফিসে এসে কেন কাঁদলেন
vào
25 Jun, 2019
সাংবাদিক আবু তাহের এর স্মৃতিচারণ
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
সাংবাদিক আবু তাহের মৃত্যুর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে এম কে
টেলিভিশনের অফিসে এসে কেন কাঁদলেন !
দিনাজপুর
জেলার পার্বতীপুর উপজেলার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সরকারপাড়া ইসলামি
য়া
ফাজিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষক, প্রবীন সাংবাদিক
এবং লেখক, ছড়াকার, প্রবন্ধকার
আবু তাহের মৃত্যুর আগে অসুস্থ শরীর নিয়ে এম কে টেলিভিশনের অফিসে এসে কেঁদে গেলেন।
রিং
বাজলো হ্যালো আমি সাংবাদিক তাহের বলছি। আপনি হাবিব
সাহেব বলছেন। আমাকে চিনতে
পেরেছেন। আমি আপনাকে খুব
ভালভাবে চিনি। দেখা করতে চাই
আপনার অফিসে, একটু সময় দিবেন। পুরাতন বাজারের কোয়েল আপনার নাম্বারটা দিলো।প্রথম দিকে কথাগুলো বলছিলেন সেই ব্যক্তিটি মৃত্যুর সংবাদ
রাত১২টায় যখন পাই তখন বড় ধরণের একটা ধাক্কা পেলাম। অফিস থেকে বাড়ী ফিরছিলাম। কিভাবে
যে বাকী রাস্তা পেরিয়ে বাসায় ঢুকলাম বুঝলাম অফিসে রিং দিচ্ছি।
গভীরভাবে
শোকাহত হয়ে পড়লাম। বারবার মনে
হচ্ছিল কেন সময় নিষ্ঠুর আচরণ করলো আমার সাথে। সপ্তাহখানিক আগে আমাকে রিং করে বললেন হাবিব আমি বিছানায় পড়ে
গেছি। আপনার ওখানে যেতে পারছিনা। আপনি ব্যস্ত মানুষ তবু আপনি একবার আসবেন ?
আমার
বাড়ি পুরাতন বাজারে মোড়ে, যে কাউকে বললে বলে দিবে সাংবাদিক
তাহেরের বাড়ী কোনটা।আপনার সাথে আরো
কথা আছে ক্যামেরাটা নিয়ে আসবেন কিন্তু। আসবেন তো। কেউ খোঁজ নেয় না। মুসলিম
(সাংবাদিক) এসেছিল। বলেন আপনি কথন
আসবেন ?
দুর্ভাগ্য
আমার যেতে যেতে পরিনি। পার্বতীপুরে
বাহিরে থাকা অবন্থায় ফেবুতে দেখি। মুসলিম ভাই
(সাংবাদিক) এর পোষ্টের ছবিতে ওনি নিথর হয়ে বিছানায় শুয়ে পাশে মুসলিম ভাই। তারপর ...। নিজেকে বড়
অপরাধী মনে হচ্ছে। কি কথা আর কি বা
দিতে চেয়েছিলেন।কোন তথ্য বা কোন
তার রচিত কোন লেখা... না কিছু চিন্তা করতে পারছিনা।অপরাধ, অপরাধ। এটি মারাক্তক অপরাধ হয়েছে তার কাছে। তার কাছে এখন ক্ষমা চাইলেও কোন ফল নেই।আসলে আমরা যেন কেমন জানি। শরীরে
বল আছে নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে বেড়াই। এবিষয়টা আগে হতো
না। এখন দেখছি দু'দিন হোক দু'যুগের
হোক মৃত্যুর আগে আমাকে কিছু বলে যেতে চায় কিন্তু এযাবৎ ক'জনের
কথা বলে যেতে পারেন নি। যেমন- মিলন’দা
(সংগঠক), মিনু ভাই (কণ্ঠ শিল্পী),
আইয়ুব
চাজী(কণ্ঠ শিল্পী), মিজান ভাই (কণ্ঠ শিল্পী) বুলবুল ভাই
(শিক্ষক), জমিস ভাই (সাবেক আর্মি),
এবং
আজ সাংবাদিক তাহের ভাই। এনারা প্রত্যেকে
মৃত্যুর আগের মোবাইলে কথাটি বলেছিলন গোপন কিছু তথ্য আমাকে দিয়ে যাবেন। অথবা তাদের প্রতিভার একটা কিছু করার জন্য। তাদের মধ্যে ক’জনের কিছু
প্রতিভার নমুনা আমার কাছে জমা দিয়েছেন। কিন্তু তবু শেষ
সময় ওই একটাই কথা আপনার/তোমার সাথে কথা আছে। এর
কারণ কি ? তাদের শেষ ইচ্ছা পুরণ করতে পারিনি। তাই তাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছি তেমনি সাংবাদিক তাহের ভাইয়ের
শেষের কথাগুলো তুলে ধরলাম।
দেশ
স্বাধীনের পর থেকে পার্বতীপুরের অবস্থা খুবেই নাজুক ছিল। তখন পার্বতীপুর অঞ্চলে ক্ষমতার লড়াই চলছিল।যে যত লুঠপাট, জায়গা দখল,
হুমকী
ধমকি ইত্যাদি করতো পারতো সে তখন সেয়ানা। তাদের
দাপটে ভাল কাজ করা দুস্কর ছিল। এসবের প্রতিবাদ
করতে তখন প্রথম সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে যে ক'জন কলম যোদ্ধা
ছিলেন তাদের মধ্য অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব প্রফেসর উর রহমান। তিনি পার্বতীপুরে খুঁজতে শুরু করেন কলম যোদ্ধাদের। সেই সময় যাদের মধ্যে নির্ভীক ভাবে এগিয়ে এলেন তারি ছাত্র এই
প্রতিভাবান মানুষটি।আবু তাহের। সেই সময় বর্তমান যারা নিজেদের কবি লেখক সাংবাদিক পরিচয় দেন তারা
তখন অনেকে এই লাইনে জন্ম হয়নি। আর যারা ছিলেন
তারা জানতেন না কলম যোদ্ধা কাকে বলে।তাইতো পার্বতীপুরে
বর্তমান কোন নামকরার সৃষ্টি হচ্ছে না। না হবার কারণ
হিংসা, লোভ, সেই
সাথে অপকৃত্তি করা। এগুলো থাকলে ভাল
ফল সৃষ্টি হবে কি করে। হ্যানচাই গাছ
আপেল ধরে ? এখন পার্বতীপুরের গাছে গাছে সব মাকাল ফল- রাগে,
ক্রদ্ধে,
অনুশোচনায়
বলেছিলেন – আমাদের বড় ভুল হয়েছে এদের চক্ষু দান করা। নিজেরাই কিছু করতে পারে না অপরের পিছনে লেগে সময় নষ্ট। ফলে কি দাঁড়িয়েছে। সে নিজেও
তলিয়েছে বিনিময় পার্বতীপুর ও ভাল মানুষের সন্ধান পাচ্ছে না।পার্বতীপুরে সাংবাদিকতা জগতে কিছু বদ,
মুর্খরা
এসে (নাম উল্লেখ করে বলেন)সব এলোমেলো করে দিয়েছে। তারা কয়দিন এই অবস্থা সৃষ্টি করবে। বয়স কত। মেধার জোড় না
থাকলে ভিক্ষারীর মত চলতে হবে।স্বাধীনতার আগের
পার্বতীপুর ভাল ছিল। তখন বিহারীরা
বাঙ্গালীদের ঘুতাতো। এখন স্বাধীন হয়ে
বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীদের ঘুতায়।কি হলো
পার্বতীপুর। কোন পরিবর্তন
আছে। নেই।এখনো বাপ বেটা
আত্মীয় সজন থেকে শুরু করে নিজের লোকদের কাজের বাধা।
আমার
অফিসের লম্বা টুল ওনার জন্য বসাবার আসন। হাতে
লাঠি ঠেস দিয়ে প্রশ্ন বোধক চিহ্নের মত করে হাতে লাঠি কেঁপে কেঁপে উপরের দিকে ঘাড়
রেখে সেই নির্ভীক সাংবাদিক দরাজ কন্ঠে বলে যাচ্ছেন। আমার তো জীবন শেষের দিকে। আমি
যদি একটু চলতে পারতাম....(কিছুক্ষণ নিরবতা, হঠাৎ লাঠি
কাঁপিয়ে) তবু লিখতে পারি, এত অনিয়ম,
এত
অনিয়ম এখন পার্বতীপুরের নিয়ম।এই অনিয়মের নিয়ম
ভাঙ্গা সময় আসবে। এখনকার ছেলে
মেয়েরা বাহিরে পড়াশুনা করে প্রযুক্তি নিয়ে ফিরছে। এই শয়তানদের তাড়াতে সময় লাগেবে। তার আগে এই পার্বতীপুর বাসীর একটা সায়েস্থা হওয়া উচিত। এত কিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে।অথচ সেই তলাবিহীন স্বাধীন ঝুড়ির দেশে পার্বতীপুরের চোখ দান করে
ছিলেন যারা সেদিনে বসে ছিলেন না আর যারা আজো বেঁচে আছে ঘরের ভিতরে বসেও নিজের কাজ
করে যাচ্ছেন।সেই রকম একজন
জীবন্ত কিংবদন্তীর কথা বলি। হাবিব আপনি বিরক্ত
হয়েছেন না তো। ...
সাংবাদিক
তাহের আলোচনায় বলেছিলেন মনসুর স্যার এই অঞ্চলের অনেক কলম যোদ্ধা তৈরী করেছেন। ওনাকে না পেলে সাংবাদিক ও লেখক আবু তাহেরের জন্ম হতো না। তার যে এত স্ব-রচিত মুল্যবান বই এই অঞ্চল তো দুরের কথা দেশের
প্রখ্যাত লেখকরা ও সেই সব বিষয় নিয়ে বই লেখেন নি। অথচ তাকে যারা চেনার তারা ঠিকই চেনে। কিন্তু পার্বতীপুরের ক’জন মানুষ এখন
তার স্বানিধ্য পায়। না মানে আপনাকে
বলছি আপনার বাবা হিসেবে না।(চা খাব) এই যে
চা’তে এত চিনি, চারিদিকে
নেশার একটা ছোঁয়া। মেধা বিকাশ হবে
কি করে। খেলাধুলার কোন
আয়োজন নেই সাহিত্য সাংস্কৃতিক কোন আয়োজন নেই। সব জায়গায় ধান্দা। টাকার গন্ধ শুকে
বেড়ায়। অথচ সেই সময়
সাংবাদিক হাতে গনা যে ক’জন। না হায়দার
সাহেবও তখন সাংবাদিকতায় সেভাবে আসেনি।শামছুল
(সাংবাদিক) ছিলেন আপনার বাবা। যাই হোক আমরা
দীক্ষ্যা নিতাম জ্ঞানীগুণী জনদের কাছে। এখন তো মঞ্চে
যারা উঠেন দেখে হাসি পায়।তারাই এখন
জ্ঞানীগুণী, অথচ একটা কিছু ভাল সৃস্টি দেখলাম না।এদের কাছে কি আশা করা যায়।পার্বতীপুরে সেই সময় জ্ঞানীগুণী বলতে গেলে দেশ বরণ্য যারা তাদের
মধ্যে – কাফি সাহেব, (ভারত
বর্ষের বিশিষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ) এক নামে সমগ্র বাংলাদেশ জানে ড. বারী,
খেলোয়ারদের
মধ্যে এক নামে জানতো হাজী মহিউদ্দিন, আর
দেখান কে আছে। আর যারা ছিলেন
জমিদার বাপের জমি ছিল আর কি করবে না ভেবে রাজনীতি নাম লেখায়। তবু তো মহির হাজী পার্বতীপুরে আওয়ামীলীগের জন্মদাতা। রাজনীতি নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। এটার জন্য তো পার্বতীপুর নষ্ট হয়েছে।কথা অন্য দিকে ঘুরে যায়।কি
বলছিলাম, ও হ্যা স্যার।
এখন
মনসুর স্যার। পার্বতীপুরে
শুরুতেই যেকাজেই করুক না কেন স্যারের কথা আসতে হবে। নইলে ওই ব্যাটা পার্বতীপুরের নয়।
পর্বতীপুরে
মনসুর স্যারসহ শামছুল আমরাই প্রথম প্রেস ক্লাবের তৈরীর পরিকল্পনা করি কোথায় হবে
কোন জায়গা ভাল হয়। স্যার প্রস্থাব
দিলেন কবি সাহিত্যিকসহ সাংবাদিকরা মিলে প্রেসক্লাব তৈরী হোক। কারণ প্রেসক্লাব হবে কলম যোদ্ধাদের জন্য।স্যার সেই সময়ের পার্বতীপুরের প্রথমসারির একজন সাংবাদিক শুধু নয়
কবি, সাহিত্যিক, কলামিষ্ট
যা দেশের প্রথমসারির পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন। দৈনিক আজাদ, দৈনিক দেশ,
সংবাদ
ইত্যাদি পত্রিকায় যখন তার লেখা দেখতাম তখন আমার মনে দারুন ভাবে বিদ্যুৎ চমকে
যেতো। তার লেখা পড়তাম মনোযোগ দিয়ে।পার্বতীপুরে যখন জাতীয় সংবাদপত্র প্রায় আসতই না এলে ওই পত্রিকা
সাতদিন ধরে পড়তাম। এমন অবস্থা।
তারপর
অনেকে সাংবাদিক হলো লেখক হলো কিন্তু পত্রিকায় উঠতো না।লিখে লিখে বস্তাবন্দী।
তখন
লেখা প্রকাশ হওয়াটাই খুব টাপ ছিলো।
কথা
প্রসংগে - আপনার ছাত্রজীবনের লেখা পড়তাম সম্ভবত ৮৮ - ৯০ এর দিকে,
সালটা
মনে নেই তবে বইমেলায় আপনার বই দেখে আমি নিজে চমকে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই আপনাকে আমার মনে হতো কিছু একটা বিস্ফরন ঘটাবেন।রংপুর বেতারে যখন আপনার কবিতা শুনেছি তখন আপনার সাথে একবার
যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম পরে কেন জানি হয়নি। আপনার কণ্ঠে যদি আমার কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেতাম ধন্য
হতাম....আমার একটা কবিতা শুনবেন?
(শুনাতেন আমি
শুনতাম, একটার জায়গায় তিনটি,
কখনো
৪টি কবিতা শুনাতো, মাঝে মধ্যে বিরক্ত হতাম। কখনো বা আধুনিক কবিতার প্যাটেন নিয়ে বলতাম। কারণ আমার কবিতা ওনি পছন্দ করতেন, তাই
একটু মাতব্বরী করতাম, করবো না কেন?
আমার
কবিতা আবৃত্তি শুনে ওনি অস্থির হয়ে উঠতেন, ওনি
কেন আপনি হ্যাঁ আপনি, পাঠক আপনাকেই বলছি আপনিও আমার প্রেমে
পড়ে যাবেন নয়তবা গায়ের লোম শিউরে উঠবে, এটা
গ্যারান্টি দিতে পারি.. হা...হা...হা.., যা
বলছিলাম আর কি, তাহের ভাই আপনার কন্ঠটা আবৃত্তির করার
মত।(লাফিয়ে উঠার মত)
তাহলে
আপনার টিভিতে দিয়েদেন না।
আশ্বাস
দিয়ে আধুনিক কবিতার নেকগুলো দেখাচ্ছিলাম মানে টিচারের উপর টিচারীগিরী করা আর কি। তার লেখার শব্দ চয়নভাল কিন্তু কিছু কিছু শব্দগত ভাব আধুনিকয় করা
আর কি।এরি মধ্যে কতবার
এই মোবাইল ফোন ডিস্টার্ভ করে। ততবার তিনি
দীর্ঘশ্বাস ফেলেন)।
না
না.., সাংবাদিকদের উপর রাগ না অভিমান আমার,
(সাংবাদিক তাহের
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভিমান সুরে বলতে থাকেন)
গুরুকে
বা সহকর্মীকে মানুষ ভুলে যায়, তবু যদি আমি
সুস্থ থাকতাম!....(দীর্ঘশ্বাস)। আর তো তারা
টেলিভিশন সাংবাদিক হলে কি হাল হতো। আপনার কথা অনেক
শুনি। এখানে যে টেলিভিশন চ্যানেল হবে পার্বতীপুরবাসী
কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু আপনি
নিজের গতিতে আজ চ্যানেলটি সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। পুরাতন বাজারের কোয়েল প্রথম জানিয়েছে আপনি সে ছেলে তাইতো,
আমাকে
পাঠিয়ে দিয়েছে আপনার কাছে। আমি আজ অসুস্থ,
চলাফিরা
খুব কষ্টকর, কিন্তু আমার কাজগুলো নিয়ে ভাবছি। কেউ আমার খোঁজ খবর নেয় না। মাঝে মধ্যে আপনারসহ ক'জনের রিং পাই,
তখন
ভাল লাগে। এছাড়া কোন
সাংবাদিক, লেখক, কবিরা,
জানতে
চায়না এই পঙ্গু সাংবাদিক তাহের আছে না মরে গেছে।আমি কি করিনি এই প্রেসক্লাবের জন্য,
তবু
অপবাদ। কারা এসে আজ
সাংবাদিক সেজে কামড়া কামড়ি করছে।জানি,
জানি
সব জানি কিন্তু আমার হাত এখনো চলে, আপনি
আমাকে সাহায্য করেন ? কারণ পার্বতীপুরের সাংবাদিকদের আমার
চেনা শেষ।কথা শেষ না হতেই
কেঁদে ফেললেন। আর ফুঁপে ফূঁপে
বললেন যাদের জন্য এত কিছু করেছি, তাদের লেখা
শিখিয়েছি, সাংবাদিকতা শিখিয়েছি তারও আমাকে এড়িয়ে চলে। এসবো একদিন হিসেব হবে।
যে ক’দিন
অফিসে এসেছিলেন নিজে গিয়ে তাকে যতবার ভ্যান থেকে হাতধরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে
তিনি ততবার হাত ছেড়ে নিয়ে বলতেন আমি নিজেই পারবো। তার মনে কত শক্তি কাজ করতো। তাকে এভাবে কেউ সাহায্য করুক তা তিনি চাইতেন না। অামি অবাক হয়ে দেখতাম সেই তেজী তরুন সাংবাদিক সে কত কষ্ট করে পথ
এগুচ্ছে, যতবার বলেছি আমাকে তুমি করে বলবেন,
উত্তরে
বারবার বলেছেন, আপনি এই লাইনে গুরু,
গুরুকে
আপনি সন্মোধন করলে আমি ও সম্মান বোধ করবো। বিরক্তের
মাঝেও অনেক কথা অবাক হয়ে শুনতাম। আবার মাঝে মধ্যে
আমার অজান্তে কথা প্রসংগে কড়া কথাও বলতাম। ওনি
মাথা পেতে নিয়ে হাসতেন।বাবার কথা
তুলতেন। বাবার কথা উঠলে
বাবাকে রিং দিয়ে আসতে বলতাম। তিনি এলে দেখতাম
দু’বৃদ্ধ ছাত্র শিক্ষককে কত মিল। অসুস্থ্য ছাত্রের জন্য কত উতলা। ব্যস্ত সময়ের মাঝে সময় দিয়ে তার লেখা নিয়ে আলোচনা।
চ্যানেলের
কাজের চাপ বেশী থাকলে তিনি এলে মনে মনে রাগ হতাম। ভাবতাম চা খাইয়ে দিয়ে বিদায় করি। তা হয়ে ওঠেনি কখনো। অনেক সময় ওনার
আবেগের কথা শুনতাম।চাকুরী নেই,
শাররীক
অক্ষমতায় আয়ের উৎস নেই, তখনি
ভাবি তার জন্য কি করা যায়। অবশেষে শেষ
আফিসে আসার দিনে বললাম আপনার জন্য একজন ছেলে রাখবো সে কম্পোজ করবে আর আপনি বলবেন। চট করে বলে বসলো (আমি হাতে লিখতে পারি।) তবে বেশ তাহলে হাতে লিখে আনবেন (নিউজ) আমি আপনার স্ক্রিপ্ট
অনুযায়ী টিভি নিউজ বানিয়ে প্রচার করবো।কথা শেষ না হলেই
তার মনে আনন্দ উঁকি দিলো।আর আপনার বসার
ব্যবস্থা ও করছি। এমন সময় মিনতি
করে বললেন- আমার যাওয়া আসার ভাড়াটা যদি দিতেন। আমি হেসে ফেলাম। কোন সমস্যা নেই। এমাসটা আমি খুব ব্যস্ত থাকবো। টিভি ডেস্ক তৈরীর কাজে ডেস্ক হলে আপনাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন
মুলক স্বাক্ষাকার নিবো। শুনে তিনি আরো
খুঁশিতে আটখানা হয়ে গেলেন। কিন্ত সেই খুঁশি
আজ কোথায় গেলো। ডেস্কও তৈরী হলো
তিনি ও তৈরী হয়ে অপারে চলে গেলেন।
যে
যাই বলুন যে ক’দিন আমার অফিসে এসে আমাকে বিরক্ত করেছেন। বিরক্ত হয়েছি ঠিকই। কিন্তু পরক্ষনেই
ভেবেছি
তিনি
যে সাংবাদিকতার শান্তির বাতাস পাননি তা আমি অনুধাবন করতে পেরেছি।কারণ মুল্যায়ন ছাড়া জীবন বৃথা। তাই তিনি ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন প্রধান সমস্যা নিজ নিজ গোত্রের
নিজেরাই।তিনি শেষ সময়ে
বেঁচে থাকা অবস্থায় মুল্যায়ন চাইছিলেন তারি সহকর্মীদের কাছে কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। দেয়নি সাংবাদিকরা, দেয়নি
লেখকগুষ্টি। একটা প্রতিভাবান
মানুষ কতটা অসহায় হলে দ্বারে দ্বারে ঘুরে একটু
মুল্যায়নের জন্য।যারা জানে তারাই
বোঝে নিজ মুল্যায়নে মৃত্যু কত মধুর হয়। কারণ কেউ চায় না
সে মরে গেলে তারি গোত্রের লোকজন মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আনন্দে
মুরগীর রোস্ট চাবাক। সে হতভাগ্যের
মৃত্যুর আনন্দে নাচতে নাচতে বলবে ওমুক মরেছে সাধারন মানুষ রেহাই পেয়েছে।
এমনি
করে কত সাংবাদিক তাহের, কত কন্ঠশিল্পী আইয়ুব নিরবে কেঁদে কেঁদে
সারাজীবনের প্রতিভাগুলোকে গলা চিপে মেরে ফেলে সে নিজেরাই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করবে।
আমরা
কি কখনো ভেবে দেখেছি সাংবাদিক তাহের, কন্ঠশিল্পী
আইয়ুবসহ যারা আর্তনার্থ করতে করতে বিদায় নিয়েছেন. আমাদের বেলায় কি হবে?
যারা
আজ স্ব স্ব প্রতিভার আঙ্গিনায় মাস্তুল তুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত বলছেন। তাদের বিবেকের কাছে একই প্রশ্ন আপনাকেও কি মৃত্যুর আগে নিজের
প্রতিভার পান্ডুলিপি নিয়ে কাঁদতে হবে স্বীকৃতি পাবার জন্য। আসুন সব স্বার্থকতা ভুলে নিজ নিজ গোত্রের প্রবীন প্রতিভাবদের
মুল্যায়ন করি যে যার অবস্থান থেকে। নইলে সবাই মিলে
একত্রে সেই কাজটি করি, যা দেখে আমাদের প্রজন্ম আমাদেরকেও
মাইলফলকে নাম লিখে রাখে। তবেই মানব জীবন
স্বার্থক হবে। আবারো বলছি,
নইলে
মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আনন্দে মুরগীর রোস্ট চাবাবে। সে হতভাগ্যের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তারা আনন্দে নাচতে নাচতে বলবে
ওমুক মরেছে সাধারন মানুষ রেহাই পেয়েছে।
“যদি মৃত্যুর
জন্য অতি সাধারন চোখের জল মাটিতে পড়ে, সেই
অশ্রুজল সাগরতুল্য মুল্যায়িত করলো মৃত ব্যক্তিকে”।
:::::::::::::::::::::::::::::::::::
হাবিব ইফতেখার
চেয়ারম্যান
এম কে টেলিভিশন