-->

প্রতিবাদী কবিতা (আবৃত্তির জন্য) মোজাহিদ ইফতেখার হাবিব


শিহরণ
ঘাতক গুলি ছোঁড়, ঘাতক গুলি ছোঁড়,
                  আবার ও বলছি, ঘাতক গুলি ছোঁড়....                    
আমাকে লক্ষ্য করে ট্রিগার চালাও
গুলিতে ঝাঁঝরা হোক এবুক আমার।
এই পিতল ক্রুগ্ধ ক্যাপসুল
আমার শরীরের জন্য প্রস্তুত করেছো,
চালাও গুলি যত ইচ্ছে তোমার।
তোমার ওই যান্ত্রিক দানব কতবার মারবে আমাকে,
একবার মরেছি, দুইবার মরেছি, হাজারবার মরেছি-
তথাপি ঢেরগুণ বেঁচে আছি।
ঘাতক গুলি ছোঁড়ো......
মানবতাবাদীহীন ওই যন্ত্র তাক করো আবার
হুলিয়া ছুটে দাও,
তোমার বেঢাড়া শরীরের রক্তাক্ত ঘামে
ট্রিগারের চাঞ্চল্য আঙ্গুল পর্যন্ত,
ঘাতকগুলি ছোঁড়ো....
আমি আবার দাঁড়িয়েছি
তোমার লালায়িত দৃষ্টি জিহ্বার বিরুদ্ধে।
মনোবল হারিও না- তাক করো,
তোমার ওই রক্ত পিপাসু যন্ত্রে
কমপক্ষে আর একটিবার আঘাত হেনে দেখ
হু-হা-হা-হা
আর পারছো না
পারবে না কোনদিন কারণ-
বহুবার তুমি ব্যবহৃত হয়েছো সভ্যতাত্তিকের বিরুদ্ধে
বহুবার তুমি গর্জে ওঠেছো আমার বিরুদ্ধে,
বহুবার তুমি বাংলার কাঙ্খিত মাটি লাল করেছো,
বহুবার উত্তপ্ত মশাল রক্তের বরষায় নিভিয়ে দিয়েছো,
আর নয়, পাবে না কোন প্রশ্রয়
ফুঁপে ওঠেছে স্বাধীন আকাশের পরাধীন বাতাস
ক্রন্দনরত শ্বাসে আজ অগ্নি জ্বলছে।

ঘাতক, যতই সাজাও তুমি সশস্ত্র সবুজ ক্ষেত্রের দূর্গ
হতাশায় প্রজ্জলিত আমার প্রশ্বাস,
ঘিরে ফেলেছে তোমায়।
আজ হতে কখনো কাবু করতে পারবে না-
কারণ-
তোমার মন্ত্র ওই বুলেট।
সাম্যভেদের টিলা থেকে তোমাকে নামতেই হবে।
আমি শুধু একক বাঙ্গালী বেষ্টন নই
এই জাতির চিরাচরিত ইতিহাসের ধমণীর প্রতিটি শিহরণ
আমি প্রবঞ্চিত বৈপ্লবিক শিহরণ
আমি স্বাধীন শিহরণ।

::::::::::::::::::::::::::::::::

বিবেক বন্ধন

আমি নষ্ট হলে- সর্বপ্রথম
কবি ও কবিতা হত্যা হয়ে যেতো ॥
আমি নষ্ট হলে- সর্বপ্রথম
বিশ্বাস উলঙ্গ করে রাজপথকে
কার্পেট পঁেচিয়ে পাঁপড় ভাঁজতাম।
আমি নষ্ট হলে সর্বপ্রথম-
জন্মকে প্রশ্ন করতাম নষ্টের জন্য কি
রক্তে আগুন জ্বলে ?
অভিধানে ঠাই নষ্ট বোধয়ক শব্দ।
আমি নষ্ট হলে সর্বপ্রথম
সমাজে বাতাস থাকতো না।
সমস্ত বাতাস আটকে রাখতাম গর্ভবতীর অলিন্দে।
তাতে প্রশব বেদনা চিরতরের মত বন্ধ হয়ে যেতো 
আর এক এক করে দ্রুতগামী দৃষ্টিগুলো 
উফড়ে ফেলতাম মাথার পাকাচুলের মত।

যে ডায়রী আমাকে নষ্টপৃষ্ঠা উপহার দেয়
ক্যালকুলেটরে হিসাব কষে,
মোবাইল ফোনে বিশ্বাস ভাড়িয়ে,
রাতকে বন্ধক রাখে রাতের হাতে,
সেই স্যালুলার তরঙ্গে এক গ্লাস পানিকে হাজার টাকাদরে বাসযোগ্য রাখতাম।
দিনারাতের তফাৎ কোন দৃষ্টি নির্ণয় করতে পারতো না॥

আমার হাতে কয়েকটি দিনছিল,
সূর্যের তাপ বাড়বার সাথে সাথে দিনগুলো ছুটোছুটি শুরু করল
আর কিছু বুঝবার আগেই কবি হয়েছি বলেই, 
মগজে পচন ধরে নষ্ট হয়ে গ্যাছি, 
অথচ- আজো কবিতা দিয়ে নব ভূমিষ্ট হওয়া শিশুকে হত্যা করিনি।
হত্যা করিনি বয়সের ভাড়ে মৃত্যুর দুয়ারমুখী দৃষ্টিকে,
তারপরও বর্ণমালাগুলো নষ্ট নষ্ট করে শ্লোগান দেয়।

আমার পিতা কবিতা লেখেন, দাদা সেকালের লখিয়িা,
আমার রক্তে সেই হিসেবের আগুন,
এ রক্তে আগুনের হিসেব কাউকে দিবো না-
কারন আমি মদ্যপান করি না,
রঙ্গলীলায় পতিতার দেহের জমিনে আবাদ করি না।

আমি নষ্ট হলে- সর্বপ্রথম
কোন যুবক কোন যুবতীকে ভালবেসে ফসল ফলাত না।

যে দিন আমি নষ্ট হবো-
সেদিন থেকে বাংলার তাবৎ কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে ক্রিকেট খেলবে।
ক্লাসে ডিগ্রীধারী শিক্ষকরা টেবিলের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।
(ছাত্রের প্রশ্নের উত্তর দেবার ভয়ে)।

যে দিন আমি নষ্ট হবো-
প্রতিটি ফার্মের মুরগী ডিমপাড়া বন্ধ করে দেবে,
কোন পিতা তার নিজমুখ আয়নায় দেখবে না, কারণ-
মা ছেলে সন্তানকে উদ্দিপনার সাড়া দেেব স্বামীর আলিঙ্গনে,
যুবতী জন্মাদাতাকে দেহদান করবে সংসদ অধিবেশনের খরচে,
সেই থেকে পশুকে বিয়ে করে সংসার বাধবে মানুষ।

আমি নষ্ট হলে- সর্বপ্রথম
সৌরচুল্লি বিস্ফরিত হয়ে আর একটি জাতিসংঘ
সাগর পাটাতনে গঠিত হবে বাঙ্গালী ত্বত্তের ভাঁড়ে,
আর এক এক করে
পৃথিবীর বয়স গুনতে শুন্য হবে, কারণ-

যে দিন আমি নষ্ট হবো-
তাবৎ বইয়ের পাতার অক্ষর মুছে যাবে
লাইব্রেরীতে মানুষের মগজের সুপ খাবার প্রতিযোগীতার চলবে অনুপ্রয়াসে।

আমার দৃষ্টি নত জানু নয়।
দৃষ্টির অগ্র বরাবর ছুয়ে পৃথিবীর ঘুরে
আমার পিঠ ছেদ করে গ্যাস বলয় হয়ে
আমি বাস করি বিবেকের উপর।
আর সেই বাসযোগ্য যদি নষ্ট হয়
তবে সর্বপ্রথম হত্যা হয়ে যাবে কবি ও কবিতা ॥
২৬/১০/২০০৫ইং
রাত-০১: ০০ ঢাকা
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
জেলখানা

আমার সময় এসেছে জেলে যাবার
ভুল পথের নকশায়, শুধু নেতাদের সাক্ষাৎকার,
স¤পূর্ণ আলাদা জনগন বিচ্ছিন্ন দেহ থেকে,
নেতারা যা সমস্যা ক্ষমতার উন্মাদনা ।
বিসজসের মন্ত্র জনগণ ।
বিশ্বাস করিনা নেতা
জনগণ নেতা নেতা আলাদা জাত পাতে বসে
চুট্কি মারে জনগণ, জনগণ ।
তাইতো ভারসাম্যহীন শব্দগুলো কানখামছে
ধরে এবার তোমার পালা জেলে যাবার, নেতাদের নয় ।
সংস্কার বিসজনের নয় । বিকল্প বিশ্বাসে।
তও¦ দিয়ে শুধু পুস্তক থাকে নেতাদের পকেটে ।
জনগণ তও¦ নয় কাদা মাটি কংকীট ।
তাই তো জেলে
যাবার পালা। আমি জেলে যাব দেহের কোষ দিয়ে
জীবন্ত জেলখানা বানাবো ।
২১/০১/২০০১
         ঢাকা
 :::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
চেতনার অশ্র“পাতে রক্তাক্ত সময়

রক্তের ঘামে মিশে আর কত লিখবো কবিতা
স্তুবাকৃতি পান্ডুলিপির হৃদ্যগর্ভে এযে নষ্ট সময়
সজীব মননে মাকড়সা কবিতার ভ্রুণে রক্ত চোষে
চিৎকার করে অশ্র“ অথচ নিরবে ঝরে যায় ......
আত্মহতির স্পন্দন পালঙ্কে দোলে ।
দেখ চেয়ে দেখ,
আমি লাশের সাদা কাফনে ও লিখেছি কবিতা,
এ যেন কবিতা নয়
দালালদের চিকামারা দেয়ালের প্রচ্ছদে
কলমকে কবরের প্রস্তুতি।
আমি কি করে ডুকরে কাঁদি দেয়ালের পিটে, দেখ-
ওপারে লাশ, এপারে আমি......
অশ্র“ দৃষ্টি দেখতে চায় না রক্তাক্ত বিশ্বাস।

জাতির নাভিতে কাঁকর, চেতনা ছিনতাই
বর্ণমালার আকাশে কালপুরুষ খোঁচিত কিংবদন্তী
ষড়ঋতু মিশে গ্যাছে রক্তের ঘামে, কান্নার ঘামে ।
বিকলাঙ্গ প্রজন্ম চোখম্যালে
প্রার্থনা ইন্দ্রে শব্দার্থ নিয়মাবলীতে যা পাওয়া
শতাব্দীর ফসিল,
থরে থরে বাতাসের চাকে
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়
চেতনার মরা ঝিলে ?

বন্ধুগণ,
অভিমান করে নয়
আমি গেলে এদেহ নিরাকার,
তবু শুন্যস্থান পূরনে চেতনা গজাবে অনুরুপ
আমারি কণ্ঠস্বরে তবে আমি নই।

তবু তবুই আমি
রক্তাক্ত কবিতার অশ্র“পাতে ইতোজন্মের স্বাক্ষর দিব।
টেরি জাতি দেখবেনা 
শুধু দেখবে উনুনের পাশে ঝরাপাতার শিরায়
আমারী দুঃখী মা, দ্বারস্ত স্তনের লালিত
এক আত্মহতি যুবকের নাম
তবু সে চিনবে.., চিনবেনা....। 
 ২১-১০-১৯৯৪
     দিনাজপুর

:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

Latest posts