মুক্তিযুদ্ধে ভুতের লড়াই (গল্প)
vào
03 Nov, 2019
“মুক্তিযুদ্ধে ভুতের লড়াই”
বেশ কিছু দিন আগের কথা ।
বাবা আমাকে ডেকে বললেন : মনি, তোর পরীক্ষা তো শেষ। পারলে যা না তোর দাদু ভাইকে দেখে আয়।অনেক দিন আমিও যেতে পারিনাতোর মায়ের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। যাবি ?
তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলাম ঃযাবো ।
ঠিক আছে ।যাওয়ার ব্যবস্থা কর ।কাল সকালের ট্রেনে যেতে হবে। তা হলে দিনে দিনে পৌঁছতে পারবি। দূরের রাস্তা।বলে বাবা বেরিয়ে গেলেন ।
এবার ভাবতে বসলাম। বাবাকে তো বলে দিলাম Ñ যাবো।যাওয়ার ব্যাপারটা ভাবতেই মনটা কেন জানি দমে গেলো।
সেই কবে বাবার সাথে স্কুলে থাকতে দাদু ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। দূরের পথ ।ট্রেন থেকে নেমে গরুর গাড়িতে করে কিছু পথ। তারপর হেঁটে বেশ খানিক দূর ।তারপর একটা ছোট নদি ।এককালে নাকি বড়ো সড়ো ছিলো নদিটা নদি পার হয়্ েএকটা মাঝারি গোছের জংগলের পাশ ঘেঁষে মোঠো পথে কিছু দূর গিয়ো একটা আম কাঁঠালের বাগান।তার ভেতরে পশ্চিম পাশে দাদু ভাইয়ের বাড়ি ।
দাদু বাই বছর পাঁেচক হলো মারা গেছেন দাদি ভাই বেঁচে আছে ।অনেক বয়স হয়েছে তার।আমরা সে দাদিকেও দাদু ভাই বলে ডাকি । ছোট থেকে সে দাদি আমাদেরকেও দাদু ভাই বলতো।আমর াও শুনে শুনে তাকে দাদু ভাই বলতাম।সে দাদু ভাই আমার বাবার নিজের মা নয়।তার নিজ ফুফ ।আমার নিজ দাদার আপন বোন ।াবয়ে হয়েছিলো দূরে। বাবার সে ফুফা মানে আমার দাদু ভাই ছিলেন মস্ত বড় আলেম। সে তলাটে তার অনেক নাম ধাম হাঁক ডাক ছিলো । বাবার বংশে নিজের বলতে এখন একমাত্র ঐ দাদি মানে দাদু ভাই বেঁচে আছেন ।
ু
রাতে খাবার পর বাবা আমাকে ডেকে বললেনঃ তোর চিন্তার কোন কারন নেই। এখন রাস্তা ঘাট সব পাকা ।
ট্রেন থেকে নেমে বাসস্টান্ড।বাসে চড়ে একেবারে তোর দাদু ভাই এর বাড়ির কাছাকাছি যাবি।সামান্য একটু রাস্তা হাঁটতে হবে বাইরের কিছু খাবি না।দেখেশুনে যাস্ । রাতে বাইরে ঘুরবি না । জায়গাটা রাতের বেল
ায় তত সুবিধের না ।
বাবা-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দাদুর বাড়ি যাওয়ার পথে সকাল সকাল রওয়ানা দিলাম।ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরে যখন দাদুর বাড়ির কাছাকাছি এসে নামলাম তখন বিকেল প্রায় শেষ । সেই মস্ত বাগান বাড়ির ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দাদু-বাড়ির সামনেএসে দাঁড়ালাম ।
চার পাশে চোখ ফেললাম। দেখলাম সবকিছুর যেন কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।বাগানের গাছগুলো ডালপালা মেলে আগ্রহ
নিয়ে তাকিয়ে আছে । ছোট গাছগুলো এখন মস্ত বড় বড় গাছে পরিনত হয়েছে । গাছে গাছে নানান পাখির ঝাঁক কলরব তুলে সন্ধার আগমনি গান শুরু করেছে ।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মাঝারি বয়সের মহিলা আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। এলোমেলো চুল আর অগোছালো
কাপড় দেখে বুঝলাম দাদুভাইএর বাড়ির কাজের লোক । আমার মুখের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বললো ঃ দাদুভাই !
তারপর দ্রুত বাড়ির ভেতরে চলে গেলো ।একটু পরে দাদুভাইকে সাতে করে দরজায় এসে হাজির হলো \ আমাকে দেখে দাদুভাই যেন আকাশের চাঁদ পেলো ্দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে তার কি উস্লাস !
বয়স হয়েছে দাদুভাইএর আগে যেমন দেখেছিলাম তারচেয়ে অনেকটা বুড়িয়ে গেছে দাদু ভাই । ্
মাথার চুল সব সাদা ।মুখে দাঁত অবশিষ্ট নেই ।গায়ের চামড়ায় কেমন চুড়চুড়ে চিড় ধরেছে আর ঢিল হয়ে গেছে তার বাধন ফরসা রং কিছুটা কালচে হয়েছে \
নাস্তার আয়োজন দেখে বুঝলাম- দাদুভাই আগে থেকেই আমার আসার খবর জানতো । হয়ত বাবা সংবাদ পাঠিয়েছে । দাদু ভাই জানালোÑবাড়ির সবকিছু, কলা এ দুধ. সরু চালের পায়েষ,পিঠে সব। ক্ষিদে পেয়েছিলো।গপাগপ সব সাবাড় করে ফেললাম ।দাদুভাইএর ফোকলা মুখের হাসি দেখে বুঝলামতার খুশির পরিমান ।
সন্ধা প্রায় হয়ে এসেছে বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়ালাম ।সন্ধার া একটা কালো চাদরযেন ক্রমান্বয়ে বিছানো হচ্ছে চার দিকের গাছ পালায় আর মাঠ প্রান্তরে ।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলামÑকেমন যেন একটা ভুতড়ে নীরবতা পরিবেশটাকেছেয়ে যাচেছ ।এর আগে যখন এসেছিলাম তখন দেখেছি সন্ধার সময় গ্রামবাসির চলাচল।মাঠ থেকে গরু ছাগল নিয়ে ফেরার ব্যস্ততা। নানান কাজের হাঁকাহাঁকি আর ডাকাডাকি। একটা নির্জন দ্বিপের মত মনে হতে লাগলো দাদুভাই এর এ গ্রামটা। গাছে গাছে পখপখালির চেঁচামেচি আর কিচিরমিচির আর নেই ।বাবার কথাটাÑ”সন্ধার পর বাইরে ঘোরাঘুরি করবি না” মনে হতেই গা-টা ছমছম করে উঠলো । বাইরে থাকতেই দাদু ভাই এর ডাক শুনতে পেলাম--দাদুভাই, ভেতরে এসো ।
রাতে খেতে বসে দাদুভাই অনেক গল্প শোনালো । তার জীবনেরঅনেক ঘটনা কথা কাহিনী । এক ফাঁকে প্রশ্ন করলামÑদাদুভাই,গ্রামটা তো এমন ছিলো না ।সবসময় লোকজনের চলাচল আর বাচ্ছাদের কোলাহল গ্রামটাকে মাতিয়ে রাখতো এর আগে এসে আমিই তো এ সব দেখেছি । এমন হলো কেন ?
দাদুভাই হঠাৎ করে থেমে গেলো। কেমন যেন চিন্তিত বলে মনে হলো তাকে ।আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন মনোযোগ
দিয়ে তাকিয়ে থাকলো। আবার প্রশ্ন কতরলাম Ñ কি ভাবছো অমন করে ?
সজাগ হওয়ার চেষ্টা করলো দাদুভাই । কই ? কি আর ভাবছি ? তুই এসেছিলি সেই কবে । তখন তোর বয়স কত কম ছিলো ।এখন বড় হয়েছিস ।সবকিছু কি আর আগের মত মনে হবে ?
তা ঠিক । কিন্তু এ পাড়ার এত লোকজন গেলো কোথায় ?
ফোকলা মুখে এক রহস্য মাখা হাসি ফুটে উঠলো ।আমার ম ুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো ঃ ভয় পাবি না তো ?
কেন ভয় পাবো ? আমি ভয় পাই না ।
সাবাস ! ্এই না হলে আমার দাদুভাই। তা হলে শোনোঃ এ তলাট এখন ভুতের দখলে । তের দাদ বেঁচে থাকতে ভুতদের উপদ্রুপ শুরু হয়। তাদের অত্যাচারে এ পাড়ার লোকজন আস্তে আস্তে ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে । আমাদের উপরেও অত্যাচার কম হয়নি ।তোর দাদু আলেম মানুষ । অনেক দোয়াদরূুদ জানা ছিলো তার। তারই জোরে তাদের অত্যাচার বন্ধ করতে পেরেছিলেন । এরপর ভুতেরা এখন পড়শির মত বসবাস করছে । তবে তাদের সংখা অনেক বেড়েছে \ মজার ব্যাপার হলো এখন ওরা আমাদের ভয় করে\ তোর দাদু বেঁচে থাকতে এক এক সময় কয়েকজন ভুতকে পিটিয়েছিলো
সেকি ! ভুতকে তো দেখা যায় না । পেটালো কেমন করে ?
তোর দাদু জানতো কি করে ভুতকে ধরে পেটানো যায় । সেই থেকে ওরা আমাদের ভয় করে।
ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ছি ভয়ে।তাহলে সত্যি সত্যি আমি ভুতের রাজ্যে এসে পড়লাম।এ ভয়ের কথা তো দাদুভাইকে বলা যাবে না। জোর করে সাহস সন্চয় করে বসে বসেদাদুভাই এর কথা শুনতে লাগলাম ।ূ
তোর দাদু ভাই ছিলো এ তলাটে একজন নাম করা লোক । যেমন তার এলম তেমনি তার বিদ্যা বুদ্ধি ।তোর দাদুর জানা ছিলো ভুত জ্বিন বশ করার সব দোওয়া দরুদ আর তাবিজ তুম্বা । ভুতেরা কোন রকম দুষ্টামি আর বদমায়েশি করলে ওদের সরদার ভুতকে হাজির করে ধমক দিতো তোর দাদুভাই । ওতেই সব ভুত ঠান্ডা হয়ে যেতো। আর কখনো সাহস করতো না আমাদের কোন ক্ষতি করার ।
দাদু যে এখন নেই., ওরা অত্যাচার করে না ?
কখন কখন একটু আধটু করার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।আমার কাছে তোর দাদুর দেওয়া তাবিজ আর দোওয়া শেখানো আছে ।
দাদুভাই , আমাকে শেখাওনা !
শেখাবো শেখাবো । এখানে যদি থেকে যাস্ তবে তো শিখতেই হবে ।
হঠাৎ পাশে কোথাও কি যেন একটা ভেংগে পড়ার শব্দ হলো। আমি চমকে উঠলাম ।দাদুভাই তৎক্সনাৎ কি সব দো পড়ে আমার গায়ে ফুঁ দিয়ে দিলো , তার সাথে মুখের কিছু থু থু এসে পড়লো আমার মুখে চোখে।
দাদুভাই তুমি ভয় পেলে ?
নাতো । কাঁপা গলায় বললামÑওটা কিসের শব্দ ?
ওটাই তো ওদের শব্দ ।কিছু খাবার চাইতে এসেছে ।ক্ষিধে পেলে এভাবেই ওরা খাবার চাইতে আসে ।কখন কখন ওরা নাঁকি গলায় গান ধরে আর তিড়িং বিড়িং করে নাচে । দাদুভাই ,তুমি বসো ,আমি ওদের কিছু খাবার দিয়েআসি ।
দাদুভাই উঠতেই আমি হাত ধরে থামিয়ে দিলাম ।না না দাদুভাই,আমি একলা এখানে থাকবো না । আমিও তোমার সাথে যাবো । দেখবো তুমি কেমন করে ওদের খাবার দাও !
আরো ভয় পাও যদি ?
না পাবো না ।তুমি আছো না ?
তবে এসো।
আমি দাদুভাএর পিছন পিছন গেলাম। দেখলাম দাদুভাই একটা ধামাতে রাখা কিছু খই মুড়ি মুড়কি লবন তেলে মেখেবাইরে নিয়ে চললো।বাড়ির পিছনে কিছু দূর গিয়ে একটা বড় তেঁতুল গাছের তলায় রেখে এলো । দাদুভাই চলে আসছে,আমি পেছন থেকে ফিরে ফিরে তাকিয়ে দেখছি ।দেখি কি !খই মড়ি মুড়কির ধামাটি দীরে ধীরে উপরে উঠে যাচ্ছে ।
আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম Ñও দাদুভাই , দেখো দেখো ধামাটা উপরে উঠে যাচ্ছে ।
আগের রাতে আমি একটা ঘরে একলাই ছিলাম ।কিন্তু এ রাতে সে ঘরে একলা থাকার আর সাহস হলো না বললামÑওদাদুভাই ,আজ আমি রাতে তোমার ঘরে থাকবো । ফোকলা মুখের দুষ্ট হাসিতে দাদুভাই বলে উঠলো Ñওরে আমার বীর পালোয়ান ! খুব নাকি সাহস তোর ।আমার ঘরে দুটো খাটই তো রয়েছে ।
রাতে দাদুভাই যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে । একটা তন্দ্রা আমার দুচোখে কেবল নেমেছে। হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম। আস্তে আস্তে ডাকছেÑওরে মনি ,উঠে আয় ,আয়! আয়!
চমকে উঠলাম। চোখ খুলে চার দিক তাকালাম । দেখলামÑঘরে আলো জ্বলছে ।না, কেউ নেই ।আমার ডাক নাম মনি ।দাদুভাই ছাড়া কেউ জানে না ।আর কেউ জানলো কি করে ? তবে কি ভুতেরা আমার নাম জেনে ফেলেছে ? কিছুটা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে থেকে ককন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানতে পারি নি ।
দিনের বেলা দাদুভাইএর বাড়ির বাইরে চারদিকে হেঁটে বেড়ালাম ।বহু দিন পর এসেছি ্ । যেন সব কিছু বদলে গেছে । নতুন নতুন মনে হ”্ছে ।তবে বাড়ি ঘরের সংখ্যা তেমন বাড়ে নি। অনেক পুরানো গাছ এখনো আছে। আম কাঠাল বট পাকুড় শিমুল শেওড়া আরো কত গাছ ! দাদুভাইকে জিঙ্গেস করলাম Ñএত পুরানো আর বড় বড় গাছ আছে কি করে ?
দাদুভাই জানালো Ñ গাছ কাটা তো দূরের কথা , কোন গাছের ডাল কাটলে ,সারারাত সব গাছের ডালে ডালে ভুতের চিৎকার আর মিছিল শুরু হয় । চেঁচামেচি হৈ চৈ চলতে থাকে সমান তালে । তার সাথে ঢিল ছোঁড়া গাছের ডালে শাপটানো পাখিদের তাড়ানো চলে সমানে ।ভয়ে কোন মানুষ আর ডাল কাটে না।তবে গাছ বা ডাল শুকিয়ে গেলে কোন বাধা নেই । শুকনো ওসব দিয়েই সারা বছর জ্বালানী আর খড়ির কাজ চলে । তোমার দাদৃুভাইও বলে গেছে গাছ না কাটার জন্য । ভুতেরা সপরিবারে বাস করে ঐ গাছগুলোতে ।দাদুভাই একদিন হাঁটতে হাঁটতে আমাকে নিয়ে গেলো সেই ছোট নদীর ধারে ।পাড়ার পুব দিয়ে নদীটা বয়ে গেছে । আগে নদী প্রবল থাকলেও এখন অনেকটা তার মরন দশা ।
নদীর পূর্ব পাড়ে দেখলাম সেই আগের দেখা ঘন জংগলটা ।আশে পাশে কোন বাড়িঘর নেই ।দাদুভাইকে জিঙ্গেস করলাম Ñদাদুভাইও ,জংগলটার নাম যে মনে নেই । দাদুভাই বললো Ñকেন রে ওটা সেই ভুতের জংগল ।
ভারি মজা তো !
কেন যাবি নাকি ঐ ভুতের জংগলে ?
কেন যাওয়া যায়না কি ?
উঁহুঁ ! লোকেরা সহজে ও ভুতের জংগলে যায় না । ভেতরে একটা বড় পুকুর আছে। খুব মাছ ওতে ।লোভে পড়ে কেউ মাছ ধরতে গেলে সে আর ফিরে আসে না । দলবল নিয়ে লোকেরা একবার মাছ ধরতে গিযেছিলো ্ মাছও পেয়েছিলো অনেক । শেষে দেখে খলুইর মধ্যে দু একটি মাছ ছাড়া সবগুলো উধাও । টএ ভুতের পুকুরের আশেপাশে বাস করে এক ধরনের ভুত । তারা মাছ খেকো বা মোছা ভুত।তারা মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে । গরমের দিনে ঠিক দুপুর বেলা আবার কখনো পূর্নিমা রাতে ভুতেরা ঐ পুকুরে গোছল করে । হৈ চৈ করে সাঁতার কাটে ।
কালে ভদ্রে কেউ কেউ এ সব দৃশ্য দেখতে পায় । ভয়ে কোন মানুষ ভুতের পুকুরে গোছল করার সাহস পায় না ।
দাদুভাই ,তুমি কি জানো কতদিন ধরে ঐ জংগল আর পুকুর ভুতের দখলে আছে ? তোমার দাদুভাইএর মুখে শুনেছি পলাশির যুদ্ধের পর থেকেই ভুতেরা ্ এ
অঞ্চলে বসবাস করছে। আর জংগলের দখল নিয়েছে পাকিস্তান হিন্দুস্তান হওয়ার বছর । শুনেছি এর আগে পুকুরের আশে পাশে ঘন লোকবসতি ছিলো ।পুকুরটা ছিলো এক জমিদারের ।পুকুরের পানি সে সময় সবাই ব্যবহার করতো ।ঝোঁপ ঝাড় আর জংগল ছিলো না । ঐ পুকুরে জমিদারের দুই বালক পুত্র ডুবে মরার পর জমিদার তার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় । স্বপ্নে তাকে বলা হয়েছিলো Ñএ ¯থান ছেড়ে না গেলে একে একে তাদের সবাইকে মরতে হবে । ক্রমান্বয়ে লোকজন এ জায়গা ছাড়তে শুরু করে । শোনা গেছে জমিদার চলে যাওয়ার পর ভুতের অত্যাচারে লোকজন ঘরবাড়ি আর জায়গা জমি ছেড়ে ওখান থেকে পালিয়ে গেছে ।
পুকুরের আশেপাশে জংগলের ভেতর এখনো অনেক ভাংগা বাড়িঘরের চিহ্ন দেখা যায় । লোকজন চলে গেলেও ও জায়গায় প্রচুর নানা ধরনের গাছপালা ছিলো ।গাছে গাছে হরেক রকমের পকপখালি বাস করতো ।তাদের কলকাকুলিতে সব সময় মুখর থাকতো এ জংগলটা । তারপর এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু আগে থেকেই পাখিগুলো এ সব গাছপালা ছাড়তে শুরু করে । কেন দাদুভাই ?
তা কি করে বলবো ? তবে আমরা বাড়ি থেকে শুনতামÑরাতের বেলা কারা যেন সপাৎ সপাৎ করে গাছের পাতার উপর মারছে । আর পাখিগুলো কোলাহল তুলে দিশেহারা হয়ে উড়ে পালাচ্ছে ।এ রকম প্রায় রাতে হতে লাগলো তোমার দাদু বলতো Ñশয়তান ভুতেরা পাখিগুলোর উপর অত্যাচার আর মা রধর শুরু করেছে
আর বোধ হয় জংগলের গাছপালায় পাখিরা থাকতে পারবে না ।লোকজন দিনের বেলায় গাছের নিচেঅকে মরা পাখি পড়ে থাকতে দেখতো ।
দাদুভাই এর কাছেনদীর ধারের এ জংগল আর তার ভেতরের পুকুরের কথা শুনতে শুনতে ও সবের একটা ইতিহাস যেন আমার মনের মধ্যে স্পস্ট হয়ে উঠেছে ।তার সাথে বেড়েছে একটা অদম্য কতুহল ও জংগলে ঢোকার আর পুকুরটা দেখার প্রবল ইচ্ছা । ভেতরে হয়ত অনেক কিছু জমা হয়ে আছে , তার মধ্যে না জানি কত কি দেখার আছে । একটা চাপ মনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে লাগলো ।
দাদুভাইএর সাথে থেকে থেকে আর ভুতের গল্প শুনতে শুনতে ভুতের ভয় বলতে গেলে অনেকটা কমে এসেছে।ভুতগুলোকে পাড়াপড়শি আর খেলার সাথীর মত মনে হয়েছে।মাঝেমধ্যে ও সব অশরীরি জীবের সাথে দুষ্টামি করতে শুরি করেছি । ওরাও হাসে আমিও হাসি । যেমন একদিন Ñযে ধামায় দাদুভাই ওদের খাবার ্ দিতো ,সে ধামার নিচে আগে থেকেই আমি কাল রংএর শক্ত শরু কৃত্রিম আঁশের রশি লাগিয়ে রেখেছিলাম।তারপর আমি আড়ালে রশির মাথা ধরে বসে ছিলাম ।
ধামাতে খাবার দেবার পর ধামাটা যখন একটু একটু একটু করে উপরে উঠতে লাগলো তখনই আমি দিলাম এক হেঁচকা টান ।ধামাটা একটা ধাক্কা খেয়ে নিচে নেমে এলো । কিছুক্ষন থেমে থাকার পর ধামাআবার একটু একটু করে উপরে উঠতে শুরু করলো । আবার দিলাম জোরে এক টান । আবার ধামাটা নি চে নেমে এলো । এভাবে কয়েক বার টানাটানির পর ধামাটা নিচে পড়ে থাকলো অনেক ক্ষন । আমিও চুপ করে থাকলাম । ততক্ষনে ভুতদের নাঁকি কন্ঠের গান শুরু হয়েছে Ñ মনিভাই দুষ্ট বড় ,আর একটু সবুর করো ।
ভুতদের গান শুনতে শুনতে কিছু টা আনমনা হয়ে পড়েছিলাম । দেখি কি শোঁ শোঁ
করে ধামাটা উপরে উঠে যাচছ।আমিও দৌড়ে গিয়ে ধামাঠা ধরতে চাইলাম।ততক্ষনে ধামাটা নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমি বোকার মত ধামার দিকে চেয়ে থাকলাম ।ওদিকে ভুতদের সে কি হাসি আর কিচির মিচির ।
আর একদিন এমনিতে দাঁিড়য়ে দেখছি ভুতের খাবারের ধামাটা কি করে উঠে যায় । দেখলাম ধামাটা একটু উঠে থেমে আছে ।মাঝে মাঝে ধামাটা ঘুরছে । কতুহলি হয়ে কাছে আসতেই ধামাটা আমার মাথার উপরে উঠে গেলো ।
আমিস কিছু দূর সরে আসতেই ধামাটা আবার নিচে নেমে এসেছে । আবার কাছে যেতেই ধামাটা আগের মত উঠে গেলো ।আমি কিছু দূর সরে আসতেই আবার উঠে গেলো । এভাবে যত বার কাছে য‘াই ধামাটা ততবার ্ উঠে যায় ।
সরে এলে নেমে আসে । বুঝলাম ভুতেরা আমার সাথে খেলা করছে । শেষ বারে ফিরে আসার সময় শুনলাম Ñভুতেরা বলছে Ñবোঁকা ! বোঁকা আর হি হি করে হাসছে।
দাদুভাই বলে দিয়েছেÑ ভুলেও যেন আমি ভুতের জংগলে আর পুকুরের ধারে না যাই। যদিও দাদুভাইআমাকে কিছু দোওয়া শিখিয়ে দিয়েছিলো াারে গরায় একটা তাবিজ বেধেঁ দিয়েছিলো ।
একদিন বিকেলেনদীর ধারে বেড়াতে গেলাম ।হাঁটতে খুব ভালো লাগছিলো । হাঁটতে হাঁটতে ভুতের জংগলের নানা কাহিনী কথা ভাবছিলাম
কখন যে সেই ভুতের জংগলের ধারে এসে উপ¯িথত হয়েছি বুঝতেই পারিনি ।
চোখের সামনে জংগলের ঝোঁপঝাড় আর ডালপালা ভেসে উঠতেই বুঝতে পারলাম এতক্ষনে আমি ভুতের জংগলের একেবারে ধারে এসে পড়েছি । একটা ভয় সারা শরীরে দমকা বাতাশের মত শিহরন খেলে গেলো । ভাবলাম Ñ এখনই এখান থেকে ফিরে যাওয়া দরকার ।পিছন ফিরে দেখলাম বেলা প্রায় শষ । একটু পরে সন্ধা নামবে । ভুতের কর্মকান্ড শুরু হবে । কিন্তু কি যেন একটা দুর্নিবার আকর্ষন আমাকে টানছে । বাতাসের মত কে যেন আমাকে সজোরে জংগলের দিকে টেনে নিয়ে চললো
দাদুভাই বলেছিলোÑএ ভুতের জংগলের ভুতেরা ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে দুর্ধষ্য পাকিস্তানী খান সেনাদের সাথে যুদ্দ করেছিলো । এ দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর যখন পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে তখন প্রায এক শত জনের একটি খান সেনাবাহিনী এ জংগলের ধারে াাস্তানা গেড়েছিলো ।ওদের সাথে কয়েকটা নসাজোয়া গাড়ি অনেক অস্ত্রসস্ত্র র্ইাফেল কামান গোলাবারুদ ছিলো । জংগলের ধারে তাবু গেঁড়ে বেশ বহাল তবিয়তে অব¯থান নিয়েছিলো।একটু দূরে ভারত সীমান্তের কাছাকাছি বড় একটা বাজারে তাদে র একটাবড় মিলিটারি ক্যাম্প ছিলো । প্রতি দিন তাদের সাথে যোগাযোগ করে অপারেশনে বেরি য়ে পড়তো ।ছোট নদী হলেও । ঐ বাজারের কাছে তাতে একটা মাঝারি সেতু ছিলো। সেতুটা রক্ষা করাও তাদের কাজ ছিলো বড় কাজ ছিলো মুক্তিযোদ্ধা খোঁজা আর পাকড়াও করা ।
মাঝে মধ্যে খান সেনারা আশেপাশেরগ্রামবাসির উপর চড়াও হতো ।গরু বকরি মুরগি জোর করে ধরে নিয়ে যেতো । কিছু লোক জনকেও তারা ধরে নিয়ে গিয়ে
জংগল ছাপ করা খড়ি বা লকড়ি সংগ্রহ করা পুকুরে মাছ ধরার কাজে লাগাতো ।রোকজন নিষেধ করেছিলো। বলেছিলো Ñএটা ভুতের জংগল আর ভুতের পুকুর । গাছ কাটলে আর মাছ মারলে ভুতেরা ঘাড় মটকে দেয় ।খান সেনারা ওসব শুনে বলতোÑ কেয়া ! কেয়া ! গর্ধান মটকাতা হ্যায় ? উ তো মুক্তি হ্যায় । হাম উছকো ঠান্ডা করেগা ।
লোকেরা বন্দুকের গুলি আর মারের ভয়ে ওদের কাজ করে দিতো ।
কিন্তু ভুতের ভয়ে তট¯থ থাকতো কখন ঘাড় মটকে দেয় সে জন্য গ্রামের লোকেরা ক্রমে ক্রমে রাতের অন্ধকারে বউ চেলেপুলে নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে
থাকলো । অল্প দিনের মধ্যে আশেপাশের গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়লে । তোমার দাদুভাই আর কয়েকটি বাড়ির লোকজন শুধু পড়ে রইলো ।
এমনি করে বেশ কিছু সময় কেটে গেলো ।হঠাৎ একদিন রাতে ভুতের জংগলে খান সেনাদের চিৎকার আর শোর গোল শোনা গেলো । তারসাথে গোলাগুলি আর গাছের ডাল ভাংগার শব্দ।কয়েক ঘন্টা ধরে চললো এসব কান্ড ।তারপর চুপচাপ ।চিৎকার কোলাহল সব থেমে গেলো ।
লোকজন রাতে কিছুই বুঝতে বা জানতে পারলো না । পরদিন সকালে কয়েকজন সাহস করে জংগলের কাছে গিয়ে দেখেসব খান সেনার া জংগলের ধারে াার কিছুটা ভেতরে মরে পড়ে আছে । তাদের গায়ে গুলির কোন চিহ্ন তারা খুঁজে পেলো না । বোঝা গেলো সবাই তারা বিনা গুলিতে মরেছে । কেউ কেউ বললো Ñ অতর্কিতে মুক্তি বাহিন ীর হাতে তারা মরেছে ।গলা টিপে সবাইকে মেরেছ্ ে।অর্ন্যো বললোÑদুর! খানসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধারা কুস্তিতে আর গায়ের জোরে পারবে কি করে ? এতগুলো সেনাকে তারা এভাবে মারতে পারেনা তাছাড়া এ অ ্নচলে মুক্তি বাহিনীর চলাচল কম ।মাঝে মধ্যে দু এক জন আসে খবর সংগ্রহ করার জন্য ।এলে তারা দাদু ভ্ইা এর বাড়িতে আশ্রয় নেয় ।
পরেস বাই ধরে নিলো খা সেনারা ভুতের হাতেই মরেছে । তবুও একট্ রহস্য থেকে গেলো ।ভযে এ কথা বাইরে কেউই প্রকাশ করলো না । বাজারের ক্যাম্পেও কোন খবর গেলো না । পরদিন কেউ কেউ গিয়ে দেখলো লাশ তাঁবু গাড়ি কমান আর কিছুই নেই । সবকিছু আগের মত হয়ে আছে ।
খবর পাওয়া গেলো সেই রাত্রে বাজারের পাক সেনারা ক্যাম্প তেুলে পালিয়ে গেছে ।দাদুভাইএর গল্পটা াামাকে এমন আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো যে আর কোন কিছু খেয়াল করতে পারিনি ।
আবার একটা প্রবল আকর্ষন অনুভব করলাম ।একপা দুপা করে জংগলের আরো ভেতরে গেলাম । দেখলাম একটা পায়ে চলা শর ু রাস্তা ভেতরে ঢুকে গেছে । গাছের শুকনো পাতায় সারা রাস্তাটা ভরে আছে । থ্মাতে পারলাম না । ঐ রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম । পাতার মৃদু মৃদু শব্দে একটা অজানা রহস্য আমার কাছে ঘনিভূত হচ্ছিলো ।তার সাথে বাতাসে গাছপালার নড়ে ওঠা এবং কিছু বুড়ো পাতার এদিক সেদিক ঝরেূ পড়ার মৃদু শব্দ ।র্শি র্শি করে কিছু ঠান্ডা বাতাস আমার মুখে চোখে কানে স্পর্শ বুলিয়ে গেলো । মনে হলো সব যেন আমার পরিচিত । হঠাৎ একটা পেঁচা জোরে ডেকে উঠলো । চমকে উঠলাম । না, ভয় নেই । নিজে নিজে সাহস সন্চয় করে একটা দোওয়্ াপড়ে বুকে ফুঁ দিলাম ।গলার তাবিজটা ধরে কয়েকবার নাড়া দিলাম ।
মনে পড়লো দাদুভাইএর কথা । বলেছিলো ভেতরে একটা বড় বটগাছ আছে । তার কাছে একটা পোড়ো বাড়ি । ওটাই জমিদার বাড়ি । ভাবলাম পোড়ো বাড়িটা দেখবো ।বট গাছটার কাছে যেতেই একটা ঠান্ডা দমকা বাতাস আমার সারা শরীরে এসে লাগলো । বট গাছটার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখলাম ।অনেক কালের
পুরানো বট গাছ । লতা নেমে নেমে মোটা হয়ে অনেক গোড়ার সৃস্টি করেছে ।তার মাঝে মাঝে অনেক ফাঁক তৈরি হয়েছে ।মনে হলো এক সময় কত মানুষ এসে এ গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতো । ভাল করে তাকিয়ে দেখে বুঝলাম Ñজায়গায় জায়গায় বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। হয়ত এতক্ষন কেউ বসেছিলো । এক পা দুপা করে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে বটগাছটা পেরিয়ে সামনে কিছু ঝোঁপ ঝাড়ের দিকে গেলাম । দেখলাম Ñ ঝোঁপ ঝাড়ের মাঝ দিয়ে একটা বড় রাস্তা ভেতরে চলে গেছে ।দুধারে নানা রকমের গাছ।শুনেছি কোন লোকজন ভয়ে ভুতের জংগলের ভেতরে আসে না । তবে রাস্তাটা সদ্য হাঁটাচলা করা রাস্তার মত হলো কি করে ? এক সময় পাক সেনারা ঘাঁটি করেছিলো, তাও অনেক আগে ।
ঐ রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম। কিছু দূর ভেতরে যেতেই দেখলাম
উঁচু পুকুরের পাড় । একটা শুরু রাস্তা পুকুরের দিকে চলে গেছে ।একটা কতুহল আমাকে তাড়া করছে । আমি হেঁটে হেঁটে পুকুরের পাড়ে উঠে গেলাম । অনেক বড় পুকুর । চারদিকেই উঁচু পাড় । দুদিকে বাঁঁধানো দুটি ঘাট।পুকুরের পাড়ে কিছু খেজুরের গাছও রয়েছে।উচুঁ হতে হতে বাঁকা হয়ে পড়েছে ।
পুকুরের স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি তবে কালচে ভাব।মাঝে পুকুরের পানিতে কি যেন জোরে নড়ে ওঠার শব্দ হচ্ছে । মনে হলো বড় বড় মাছ আছে পুকুরে ।পুকুরের চার পাশ ঘুরে দেখার প্রবল ইচ্ছে হলো । এদিকে সূর্য ডুবে যাচেছ বুঝতে পারছি ।ক্রমশ অন্ধকার নেমে আসছে ।তবু হাঁটতে লাগলাম।সব দিক ঘুরে পশ্চিম পাড়ে এলাম। এ দিকটায় গাছপালা ঘন ।গাছপালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে একটা বড় পুরানো দালান বাড়ি । এ বাড়িটা দাদুভাইএর গল্পে বলা বলা সেই ভুতড়ে বাড়িটা নয়তো ? আমার ভেতর থেকে কে যেন বাড়িটার দিকে আমাকে টানছে। যা যা ভেতরে যা , গিয়ে দেখে আয়।একটা ভয় আমার মধ্যে কাজ করছে । তবুও প্রবল আগ্রহ আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ।
বাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালণাম।াবরাট বাড়ি।দৈর্ঘে প্রস্তেবেশ প্রশস্ত । দেয়ালগুলো বেশ পুরানো ।তাতে ছোট ছোট চাপাতি ঘাষ গজিয়েছে। কিন্তু ভেতরটা ঝকঝকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হলো ।ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকলাম। ঘরের ছাদ ঠিকই আছে ।
===========================================
আমার কিছুটা সাহস ফিরে এলোস ।বললাম Ñও! তুমি বুঝি দাদুভাইএর
সখি ? তা ভালই হলো।আর একদিন এসে কথা বলে যাবো ।
না না দাদুভাই,তা হয় না । আমাদের বাড়িতে তুমি এসেছো পরথম দিন । কিছু না খেয়ে যাবে , তাকি হয় ? আয় আয় ঘরের ভেতরে আয় ।
বাতাসের মত কি যেন একটা ঘরের দিকে গেলো।আমি এক পা দুপা করে ঘরের ভেতরে এলাম। ওমা! একি! ঘরে তো বসার কিছু ছিলো না ! এখন দেখি চেয়ার টেবিল সব রয়েছে । ঘরে কেউ নেই ।তবু ভুতো দাদুভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম Ñতমি দাদুভইএর সখি। তোমাকে কি বলে ডাকবো ?
কেন রে ? ভুতো দাদুভাই বলে ডাকবি ।আমিও তোর দাদুভাই।
এখন আমি যাই ভুতো দাদুভাই ? আমি না গেলে আমার ও দাদুভাই চেঁচামেচি আর খোঁজাখুঁজি করবে । চিন্তায় মরে যাবে ।
তুমি কোন চিন্তা করো না দাদুভাই। আমি ভুত পাঠিয়ে তোমার খবর ঠিক জানিয়ে দেব ।আমি এ ভুতের জংগলের রানী । বলে আবার সেই হাসি হাসতে লাগলো ।
আমি বললামÑ ও ভুতো দাদুভাই তোমাকে যে দেখতে পাইনা ?
না দাদুভাই , আমাকে দেখতে চেওনা দেখলে ভালো লাগবে না ।বুড়ো হয়েছি ,শরীরে কিছু নেই।তা ছাড়া আমরা তো হাওয়ার মত। যেকোন রূপ ধরতে পারি । মানুষ জীব জন্তু সব কিছুর ।তবে সব সময় ধরি না ।
আমি আবদার ধরলামÑ ও ভুতো দাদুভাই, আমার সামনে রূপ ধরে এসো না ! ন্ দেখে কি গল্প করা যায় ?
তুমি বলো কি রূপ ধরলে তুমি খুশি হবে ? কার মত ?
সে তুমি জানো । তবে আমার যেন ভালো লাগে । ভয় না পাই ।আমার চার দিকের বাতাসগুলো কাঁপতে লাগলো । একটা শোঁ শোঁ আওয়াজ হলো । তার পর থেমে গেলো । একটু পরে পাশের ঘর থেকে শাড়ি পরা একজন বয়ষ্ক সুন্দরি মহিলা বেরিয়ে এলো ।
এবার পছন্দ হলো তো ?
কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ।মুখে শব্দ বের হলো Ñ এতো সুন্দর তুমি ভুতো দাদুভাই ?
নারে না,আমি হয়েছি তোমার দাদভাইএর বোনের মত । তুমি দেখোনি । দেখবি কি? তোমার তো বয়স তখন দুএকদিন ।
ভুতো দাদুভাই, তুমি সে কথা জানো কি করে ?
জানি রে তোদের সব কথা জানি আমি ।
ও ভুতো দাদুভাই,তোমার কি বিয়ে হয়েছিলো ? ভুতের কি বিয়ে হয় ?
কেন রে বিয়ে করবি নাকি ?
ধুৎ ! ভুতকে আবার বিয়ে করা যায় ?
আবার একটা নাঁকি হাসি ঘরটাকে ভরে দিলো । বেশ কিছুক্ষন পর ভুতো দাদুভাই বললো Ñ বিয়ে থা না করলে ছেলে পুলে হলো কি করে ? আমার অনেক ছেলে পুলে নাতি নাতনি আছে । পরে ওদের ডাকবো । তখন দেখবি এ ঘর দোর ভরে যাবে ।
ওরা আমাকে কিছু বলবে নাতো ?
দুর বোকা ! তা বলে নাকি ? তোমার কোন কোন ক্ষতি ওরা করবে না। তুমি তো আমদের মেহমান – কুটুম ।আমার সখির নাতি ।ওরা তেমাকে আদর করবে যা খেতে চাবে খাওয়াবে ।
আচ্ছা ভুতো দাদুভাই, তোমার বয়স কত ?
সে আর কত হবে । এ ধরো সত্তুর হাজার বছর ।
ওরে বাপরে ! এত বয়স তোমার ?এতদিন তোমরা বাঁচো ?
হ্যাঁ দাদুভাই ,আমরা এ রকমেই বাঁচি । সহজে মরি না ।
সে কি ! তোমরা তো মরে গিয়ে ভুত হও। আবার মরবে কি?
তোমরা ভুল জানো ।ভুতেরা একটা জাতি । ভুত আর জ্বিন একই বংশ থেকে এসেছে ।
আমরা তো জানি মরে গিয়ে যারা কবর বা শ্বশানে জায়গা পায়না ,তাবাই ভুত হয়ে যায় । গাছে গাছে জংগলে বনবাদাড়ে শ্বশানে মশানে পাহাড় পর্বতে ঘুরে বেড়ায় ।
হিঁ হিঁ করে দুষ্ট হাসিতে ভুতো দাদুভাই বললোÑতোমরা কিছুই জানো না। তোমরা ভুল শুনেছো।মরে গিয়ে কেউ ভুত হযে আসে না ওটা কিছু মানুষের বানানো কথা । আসলে মানুষের মত দলে দলে এ পৃথিবীতে বসবাস করে আসছি । আমাদেরও পাড়া গ্রাম গজ্ঞ থানা জেলা ও রাজ্য রয়েছে ।আমরাাও মানুষের পাশাপাশি থাকি । তোমরা যেমন আমরাও তেমন আছি ।
তাহলে জ্বিনেরা তোমাদের কে হয় ?তারা তোমাদের সাথে থাকে কেন?
না না দাদুভাই , ওরা বড্ড বদমাশ আর বড় ডান্ডাবাজ ।খালি ঝগড়াঝাটি আর মারামারি করে । ওরা আমাদের সাথে থাকরে কি“! আমরা হলাম শান্তি প্রিয় । আমরা কারো ক্ষতি করিনা । তবে কেউ আমাদের ক্ষতি করলে আমরা ছাড়িনা । ঘাড় মটকে দেই ।
ও দাদুভাই ,তুমি জ্বিনদের কথা কি বলছিলে ?
ওরাও আমাদের বংশের ।আমরা একই বংশে ছিলাম । আলাদা হয়ে গেছি ষাট লক্ষ বছর আগে ।
কি ভাবে আলদা হলে ?
সে আর বলো না !জ্বিনের বাদশার এক ছেলে মানুষের এক সুন্দরি মেয়েকে দেখে সবকিছু ভুলে যায় । বাবা মাকে না জানিয়ে বিয়ে করে।বাদশা রাগে তাকে নির্বাসন দেয় এক নির্জন দ্বিপে । সেখানেই মানুষ -বউকে নিয়ে সংসার পাতে জ্বিনযুবরাজ। তাদের অনেক ছেলে পুলে হয় । তারা জ্বিন জাতি থেকে সম্পূর্ন আলাদা হয়ে যায় । জ্বিন আগুনের । তাই ওদের স্বভাব খুব প্রখর । মানুষের বউএর ছেলেপুলে গুলো হলো ঠান্ডা মেজাজের।ওদের মধ্যে আর আগুনের উগ্র তাপ থাকলো না । বাতাসের মত গুন পেলো তারা । সেই রাজার ছেলের বংশ হলাম আমরা । মানুষকে আমরা ভালবাসি । তাই ওদের কাছাকাছি থাকি। জ্বিনরাও আমাদের ক্ষতি করে । তবে কিছু ভাল জ্বিনও আছে ।
ভুতো দাদুভাই হঠাৎ উঠে বসলো । বললো Ñ ওমা! নামাজ পড়া হয়নি ।সময় চলে যাচ্ছে । পাশের ঘরে চলে গেলো ভুতো দাদুভাই । আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম।
কিছুক্ষন পর ভুতো দাদুভাই আমার পাশে আবার এসে বসলো । Ñ কি দাদুভাই,তোমার ভয় পাচ্ছে না তো ?
না কিসের ভয় ?তুমি তো আছো আমার ভুতো দাদুভাই । আচ্ছা ভুতো দাদুভাই তোমরা নামাজ পড়ো কেন ?
কেন ভাই ? আমরা যে মুসলমান ভুত । আমর্ ানামাজ রোজা হজ্ব সবই করি । জংগলের দক্ষিন ধারে রয়েছে হিন্দু ভুতের পাড়া। ওরা দেবতা পূজো করে । আরো
একটু দূরে পুব পাশে একট্া খৃস্টান ভুতের পাড়াও রয়েছে ।
ওদের সাথে তোমাদের মারামারি হয়না ?
না না কি বলছো দাদুভাই ? ধর্ম রাজনীতি নিয়ে আমরা মারামারি করি না । আমরা সবাই শান্তিতে বাস করি ।
তোমরা তো খুব ভালো দাদুভাই ।মারামারি ঝগড়া ফাসাদ করো না । আমরা মানুষরা সব সময় ঝগড়া ফাসাদ মারামারি করি।আমরা যদি তেমাদের মত হতাম!
ভুতো দাদুভাই আমার কথা শুনে খুশিতে কিছুটা গদ গদ হলো । Ñ ঠিক বলেছিস ভাই । তুমি তো আমার মানুষ দাদুভাই ।তোমার মত ......................।
কি যেন বলতে চেয়ে কেঁদে ফেললো ।ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে সে কি কান্না আমার মনে হলো । উঠে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেই । উঠলাম । তার মাথায় হাত দিলাম। গাটা ছম ছম করে উঠলো ।মনে হলো তার তো কোন শরীর নেই। শুধু হাওয়ার মত হাতে পরশ অনুভব করলাম । আবার চেষ্টা করলাম তাকে স্পর্শ করার । কিন্তু বাতাস ছাড়া কিছুই স্পশৃ করতে পারলাম না । তবুও ভুতো দাদুভাই মানুষের মত শরীর ধরে আছে কেমন করে ?
ভুতো দাদুভাই এবার মুখ তুলে চাইলো । Ñ না রে,আমাকে ছুঁইতে পারবি না । বস গিয়ে । তোদের মত দেহ থাকলে তো তোমাকে কোলে করে আদর করতাম । সেটা আমাদের হয় ন ।
আমি আবার গিয়ে বসলাম । Ñ ও ভুতো দাদুভাই .তুমি এতক্ষন কাঁদলে কেন ?
একটা বড় দীর্ঘশ্বাস যেন তার ভেতর থেকে বেরিয়ে গেলো । Ñ সে দুঃখের কথা শুনে কি হবে দাদুভাই ? ঠিক তোমার মত আমার একটা নাতি ছিলো ।বাঙরা দেশের মুক্তি যুদ্ধে শহীদ হয়ে গেছে ।খান সেনাদের গুলিতে মরে গেছে ।
সে কি ! তোমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছো ?
করেছি বই কি । তোমরা বুঝি জানতে না ?
না তো। ও ভুতো দাদুআই, বলো না তোমরা কিভাবে যুদ্ধ করেছো । তোমাদের অস্ত্র সস্ত্র কই ?
আমাদের অস্ত্র লাগেনা ।আমরা উল্টো দিক থেকে ধরে ঘাড় মটকে দেই ।
কিনতু ও ভুতো দাদুভাই , তোমাদের তো গায়ে লাগেনা । তোমরা তো বাতাসের মত ।তোম ার নাতি গুলিতে মরে শহীদ হলো কি করে ?আবার একট্ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ভুতো দাদুভাই । Ñ সে খুব দুঃখের কথা ।এমনিতে কোন বন্দুক আর রাইফেলের গুলিতে আমাদের কিছু হয় না । ঐ পাক সেনাদের কাছে ছিলো আগুনের বন্দুক । যার গুলিতে আমাদের গায়ে আগুন ধরে যায় । বাতাসেও আগুন ধরে ।ঐ আগুনের বন্দুকের গুলিতে আমার নাতি মরেছে ।
ওবুতো দাদুভাই ,বলো না তোমরা কোথায় কিভাবে খান সেনাদের সাথে মুক্তি যুদ্ধ করেছো ?
দাদুভাই, তুমি কি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছো ?
না , ভুতো দাদুভাই । আমার তখন জন্মই হযনি। দেখবো কি করে ? তবে শুনেছি সে ভীষন যুদ্ধ ! আমাদের দেশের ছেলেরা ঐ খান সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে ওদের হারিয়ে দিয়েছে । ওরা এ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আরো শুনেছি ওরা ভয়ানক অত্যাচার করেছে এ দেশের মানুষের উপর ।তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে । নারী শিশু সহ বহু মানুষকে ওরা মেরে ফেলেছে ।
টিক শুনেছিস দাদুভাই । সে কঠিন যুদ্ধ । সে যুদ্ধে কত যে মানুষ মরেছে ,তার তুলনায় ভুতেরা কম মরেছে। তবে যুদ্ধ করেছে ভীষন ভাবে
ও ভুতো দাদুভাই,শুনাও না তোমরা কেমন তরে যুদ্ধ করেছো ?আর যুদ্ধ করলেই বা কেন ?
কেন ?আমরা এ দেশের বাসিন্দা না ? আমরা কি এ দেশকে ভাল
বাসি না ?পাকসেনারা এ দেশের ক্ষতি করবে ,আমাদের ক্ষতি করবে , আমরা তা সহ্য করে যাবো ? কিছু বলবো না ? চেয়ে চেয়ে দেখবো ?তাছাড়া জীবজন্তু গাছপালা যা কিছু এ দেশে াাছে ,সব তো আমাদের । সবার দেশ এ বাংলাদেশ বিদেশীরা অন্য দেশ এশে এসে হামলা করবে ,অত্যাচার করবে ,দখল করে নেবে ,আমরা তা সহ্য করবো ভেবেছো ? আমি সব ভুতকে বলে রেখেছি এরপর আে দেশ যদি বাংলা দেশের ক্ষতি করেেত আসে বা দখল করতে চায় , সে দেশ কে আচ্চা শিক্ষা দেবে ।যাতে ভবিষ্যতে আর কোন দিন এদেশের দিকে চোখ তুলে না তাকায় ।
আমি দাদুভাইএর মুখে শুনেছি Ñজংগলে নাকি তোমাদের সাথে পাকসেনাদের ভীষন যুদ্ধ হয়েছিলো ?
ঠিক শুনেছিস দাদুভাই । আমাদের এ ভুতের জংগল আর তার আশেপাশের অঞ্চল ৭১’এর যুদ্ধের সময় পাকসেনারা দখল করে নিয়েছিলো।
কত কামান বন্দুক আর গাড়ি নিয়ে তারা এখানে ঘাঁটি করেছিলো । অনেক সৈন্যসামন্ত আর তাদের চেলা চামুন্ডারা এখন তাবু গেঁড়ে বসেছিলো । আশেপাশের গ্রামগুলোতেওরা অত্যাচার চালাতো । ঘরবাড়ি তছনছ করতো ।দিনের বেলা লোকজনদের ধরে । এনে জংগলে বেঁধে রাখতো ।রাতের বেলা তাদের উপর অত্যাচার করতো ,মেরে ফেলতো । তারপর ওদের পুঁতে ফেলতো। এখনো অনেক লম্বা গর্ত দেখতে পাবে ।তাদের কতকগলো কবর , আর কতকগুলো ওদের লুকাবার জায়গা। তোমরা ট্রেঞ্চ না কি বলো। ওরা পুকুরটাও দখল করে নিয়েছিলো । মাছ মারতো আর কাপড় চোপড় ধুতো। ইচ্ছামত সাবান দিয়ে গোছল করতো। প্রথম প্রথম আমরা কিছু বলিনি । ওদের কার্যকলাপ আমরা লক্ষ্য করছিলাম । সুে যাগ খুঁজছিলাম কি ভাবে ওদের শায়েস্তা করা যায় । সুযোগ এসে গেলো । ওরা যখন গাছ কাটতে শুরু করে দিলো , বড় বড় চুলায় আগুন জ্বালাতে লাগলো ,
তখন ভুতেরা গেলো ক্ষেপে । এমনিতে ওরা আগুন সহ্য করতে পারে না ।
ও ভুতো দাদুভাই, লোকেরা জংগরে মাঠে রাতে ভুতের আগুন দেখে কি করে?
না দাদুভাই, ওটা তোমাদের ভুল ধারনা । আসলে ওটা ভুতের আগুন নয় , ভুতের আলো।
বলো ভুতো দাদুভাই, তারপর কি হলো ?
সব ভুতেরা আমার কাছে এসে জড়ো হলো ।তোমার ভুতো দাদু বেঁচে থাকতে এ সব সামলাতো। তার মৃত্যুর পর সবকিছু দায়িত্ব আমারই ।
কিছুক্ষন থামলো ভুতো দাদুভাই ।মনে হলো Ñ ভুতো দাদুভাই মনে মনে হয়ত কাঁদলো ।
বললামÑকি হলো ভুতো দাদুভাই ?
আমি ভুতের সবাইকে বললাম Ñযারা আমাদের দেশ আমাদের বসত বাড়ি দখল করতে এসেছে তাআ আমাদের শত্র“ ।গাছ কেটে আর চুলার আগুন জ্বালিযে আমাদের ক্ষতি করছে । গাছগুলো আমাদের আশ্রয় আর থাকার জায়গা। আমি জানতে চাইলাম Ñ আমাদের শত্র“দের তাড়াতে তোরা কি করতে চাও ? সবাই এক কথায় জানালো Ñআমরা যুদ্ধ করবো আমাদের শত্র দের সাথে। এ দেশের মানুষ যেমন যুদ্ধ করছে আমরা ভুতেরাও তেমন যুদ্ধ করবো । ওদেরকে তাড়িয়ে তবে ছাড়বো । বহু জায়গায় আমাদের ভুতেরা শত্র“ সৈন্যের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে ।
বললাম Ñ শুনে খুশি হলাম । তোমরা সবাই প্রস্তুত হয়ে যাও । তোমরা কি প্রস্তুত?
সবাই চিৎকার করে বলে উঠলো Ñ আমরা সবাই প্রস্তুত । তারপর শুরু হলো
স্লোগান Ñ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ! ভুতো রানী জিন্দাবাদ ! ভুতের ঐক্য জিন্দাবাদ !
শত্র“রা সব নিপাত যাক ! াআমি যুদ্ধের যাবতীয় ভার কদমা ভুতকে দিলাম। ও সব চেয়ে শক্তিশালী আর বুদ্ধিমান ।
তারপর কি হলো ?
তারপর যুদ্ধ ।
বলো ভুতো দাদুভাই , কি করে যুদ্ধ শুরু হলো ?তোমাদের তো অস্ত্র নেই ।
আমাদের অস্ত্র লাগে না । আমরা হঠাৎ করে ঘাড় মটকে দেই । গলা চিপে ধরি ।
আমাদের তো কেউ দেখতে পায়না ।সবাই ভয়েতে এমনি পালায় ।তবে এ যুদ্ধে ভুতেরা অস্ত্র ব্যবহার করেছে । খান সেনাদের কেড়ে নেয়া অস্ত্র ।
প্রথমে ভুত যোদ্ধারা গাছে গাছে আলো জ্বালিয়ে নানা বিকট শব্দ করে ওদের ভয দেখায় । ওদের কমান্ডার গাছের আলোগুলোকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে । সে কি গুলি ! তুমুল গোলাগুলি ।
অত গুলি করে ওদের কি কোন লাভ হয়েছে ?
লাভ ওদের হযনি । তবে আমাদের কিছু ভুত মারা গেছে । তার মধ্যে আমার ছেলে আর নাতি ছিলো । বলেছিলাম ওদের হাতে আগুনের বন্দুক ছিলো । ঐ আগুনের গ্যাসে ওদের শরীর ঝলসে যায় । আর ভেতরের বাতাস নষ্ট হলে ওরা মরে যায় ।
আমার ছেলে আর ন াতি খুবই সাহসী ছিলো । ঠিক তোমার মত কোন কিছুতে ভয় পেতো না । ওরা গাছের ডালে বসেছিল মজা দেখবে বলে ।ওরা ওখানেই আহত হয ।একদিন পর মারা যায় । ঐ দিকে ওদের কবর আছে । তোমাকে দেখাবো ।
তারপর কি হলো ?
তারপর ভুত কমান্ডার ভুতদের হুকুম দিলো Ñ ইঁট পাটকেল মেরে ওদের কাবু করে ফেলো । শুরু হলো ইঁট পাটকেল ছোঁড়া । কারো মুখে, কারো মাথায় ,কারো চোখে,
কারো পিঠে পেটে পড়তে লাগলো সমান তালে ঢিল। আহত হতে লাগলো শত্র“ সেনারা । উপরে বসে আমি দেখছিলাম। প্রথম দুদিন এভাবে গেলো । ভাবলাম ওরা ভয়ে সরে যাবে। না ওরা গেলো না। বরং উল্টো গুলি ছুঁড়তে লাগলো ।
আমি হুকুম দিলাম Ñ ওদের সবাইকে ধরে ঘাড় মটকে দাও আর অস্ত্র সস্ত্র কেড়ে নাও । যেই হুকুম সেই কাজ । রাতে পাক সেনাদের এক এক করে ঘাড় মটকে দেওয়া হলো।তাদের সব অস্ত্র এনে জমা করা হলো একটা বড় গাছের নিচে। শত্র“সেনার সব অসার মৃত দেহ ছড়িয়ে ছিটিযেয় পড়ে রইলো ।
গোলাগুলির আর কোন শব্দ নেই। সবকিছু নীরব শান্ত । এখানকার মানুষেরা ভাবলো Ñ পাক সেনারা ক্যাম্প তুলে নিয়ে চলে গেছে । একদিন পর সাহস করে দু ্একজন গ্রামবাসি ভয়ে ভয়ে দেখতে এলো । এসে দেখলো খান সেনারা সব মরে পড়ে আছে । গায়ে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। সবাই ঘাড় কাত হয়ে পড়ে আছে ।
বুঝলো সব খানসেনা খতম । তখন তারা বলাবলি শুরু করলো Ñ কে এদের মারলো ? আজব ব্যাপার ! নিশ্চয় ভুতেরা এদের মরেছে ।তারা আনন্দে ফেটে পড়লো । চিৎকার করতে লাগলো Ñ খানসেনা সব শেষ ।
আমি বলরাম Ñ ও দাদুভাই, খবর শুনে আর খানসেনারা এলো না ?
না দাদুভাই । হয়ত খবর পেয়েছিলো , ভয়ে তারা এদিকে আসেনি । কারন পাশের পাকসেনা ক্যাম্পেও ভুতেরা চড়াও হয়েছিলো ।বিস্তর মারধর করেছে । তবে কাউকে মেরে ফেলেনি । ওরা ভয়ে সেদিনেই পালিয়ে গেছে ।
লাশগুলো ?
হ্যা ,ওরা শত্র“ হলেও মুছলমান ছিলো । আমরা মুছলমান ভতেরা মিলে ওদের জানাজা পড়ে জংগলের ভেতর কবর দিয়েছি । ওদের জিনিস পত্তর আর গাড়িগুলো পুকুরে ফেলে দিয়েছি । সব পরিষ্কার। শুধু ওদের রান্না তরার চুলা আর খোঁড়া গর্তগুলো এখনো আছে । তবে গাছের পাতা , আবর্জনা ময়লা ধুলোবালি পড়ে আস্তে আস্তে ভরে যাচ্ছে ।
আচ্ছা দাদুভাই , তোমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছো । তোমরা মুক্তিযোদ্ধা । তোমরা পুরষ্কার চাওনা ?
কি যে বলো দাদুভাই! আমরা যুদ্ধ করেছি আমাদের দেশের জন্য ,আমাদের মাতৃভূমি জন্য। তার জন্য আমরা কোন মজুরি চাইনা ।পুরষ্কার কোন কিছু নেয়া মানে তো মুক্তিযুদ্ধের মজুরি নেয়া। আমি শুনেছি তোমাদের মানুষের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা অনেক বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা বাগিয়েছে। পুরষ্কার হিসাবে অরেক কিছু পেয়েছে । তোমাদের মানুষগুলো ভীষন লোভী দাদুভাই । নিস্বার্থ ভাবে কিছুই করতে চায়না ।শুধু পেতে চায় সম্পদ গাড়ি বাড়ি কাড়ি কাড়ি টাকা আর ক্ষমতা। সেজন্য তো তোমাদের দেশটার উন্নতি হচ্ছে না । সব াই খাঁই খাঁই করছে ।আমরা চাই মান ুষগুলো দেশের জন্য নিস্বার্থ ভাবে কাজ করুক । এদেশে সবাই সুখে শান্তিতে মিলেমিশে বাস করুক । আর মানুষেরা যেন আমাদের ভুতদের বিরক্ত না করে ।
ভুতো দাদুভাই , ভবিষ্যতে কি তোমাদের যুদ্ধ করার কোন পরিকল্পনা আছে ?
হ্যাঁ দাদুভাই । ।এছ বই কি!আমরা চাই আমাদের এ দেশটা চিরকাল মুক্ত
স্বাধীন থাকুক । কেউ যেন এর দিকে হাত না বাড়ায়। আক্রমন না করে । আমরা পাকিস্তানী সৈনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি । আবার যদি কোন দেশ আমাদের দেশের উপর আক্রমন চালায় বা ক্ষতি করতে আসে ,তবে আমরা আবার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো । আমাদের বড় পরিকল্পনা হলো Ñ পৃথিবীতে যেখানে যেখানে অন্যায়ভাবে মানুষ মারা হচ্ছে , ঘরবাড়ি আশ্রয় ধ্বংস করা হচ্ছে ,আমরা সেখানে সেখানে ভুত সৈন্য পাঠাবো । সারা পৃথিবীর ভুতদের একটা সম্মেলন আমরা অচিরেই বাংলা দেশে ডাকবো। এ ব্যাপারে আমরা কিছু খবরাখবর পাঠিয়েছি।
ও ভুতো দাদুভাই ,তোমাদের সম্মেলনে তো সব জাতের ভুত আসবে ?
আসবে বই কি! তোমাদের মত আমাদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া ফ্যাসাদ হয় না ।
ও ভুতো দাদুভাই , অনেক রাত হলো । এখন আমি যাই ! ও দিকে দাদুভাই
আমার জন্য চিন্তায় মরে যাবে । রাতে ঘুমাতে পারবে না ।
আরে না না। বলেছি তো , তার কাছে আমি খবর পাঠিয়েছি । তুমি আজ আমাদের মেহমান । তোমাকে নিয়ে আজ রাতে আনন্দ ফ’র্তি হবে , নাচ গান খাওয়া দাওয়া হবে । আমি সব ভুতকে খবর দিয়েছি । আজ তোমার জন্য আনন্দ করবো।
সে রাতে আমি ভুতের জংগলে ছিলাম । ভুতের রানীর বাড়িতে সারারাত ভুতের নাচ দেখিছি ,গান শুনেছি । সে কি নাচ আর গান ! আমিও তাদের সাথে গেয়েছি নেচেছি । ওরা কত ফলমূল আর আম কলা আনারস আমাকে খাওয়ালো।
শেষ রাতে কখন যে আমি ভুতো দাদুভাইএর ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি । যখন ঘুম ভাংগলো, তখন দেখলাম ভোর হয়েছে । বেলা উঠি উঠি করছে । আমার দাদুভাই সেই কাজের লোকটাকে সাথে করে এসেছে আমার খোঁজে ।
বুঝতে পারলাম আমি ভুতের জংগলের পোড়ো বাড়ির মেঝের উপর শুয়ে আছি।
দাদুভাই হাসতে হাসতে আমার হাত ধরে টেনে তুললো ।বললোÑ আচ্ছা তো তুমি দাদুভাই ! কিছু না বলে না কয়ে এ ভুতের জংগলে ঢুকেছো ? ভাগ্য ভালো তুমি আমার সখির দেখা পেয়েছো । চলো ।
0 Comments