-->

আল কোরআনের কাব্যানুবাদ (১২নং ছূরা ইউছুফ) -আলহাজ্জ্ব প্রফেসর মনসুর উর রহমান

                 

 

আল কোরআনরে কাব্যানুবাদ করছেনে আলহাজ্জ্ব প্রফসের মনসুর উর রহমান


              ১২ নং ছূরা ইউছুফ  [ আল্লাহর নাবী হজরত ইউছুফ ( আ: ) ]
   আয়াত: ১১১ , রুকু : ১২, অবতীর্ন : মক্কায় ।


পরম কৃপালু আল্লাহর নামে ......................।

১. আলিফ - লাম -মীম ।
এ সব সেই সুস্পষ্ট গ্রন্থের প্রভূত নমুনা।

২. অবতীর্ন করেছি কোরআন আরবী ভাষাতে ,
তোমরা যাতে বুঝে নিতে পারো ।

৩.         উত্তম কাহিনী এক করেছি বিবৃত তোমার কাছে
অবতারিত কোরআনের অহি মারফত।
এর পূর্বে তুমি ছিলে অজ্ঞদের অন্তর্গত এ সব বিষয়ে।

৪.        যখন বলেছিলো ইউছুফ পিতাকে তার ,
হে পিতা ! দেখেছি তারকা একাদশ , সূর্য চন্দ্র ,
দেখেছি তাদের অবনত শির আমার প্রতি।

৫. উক্তি পিতার ঃ হে পুত্র আমার !
তোমার স্বপ্নকথা করো না প্রকাশ তোমার ভাইদের কাছে।
করো যদি , তরে তারা ছড়াবে আকে ষড়যন্ত্রজাল বিপক্ষে তোমার।
 জেনে রেখো , শয়তান প্রকাশ্য শত্র“ মানুষের।

------------------------------------------------------
৪. ইউছুফ (আ:) ঃ হজরত ইয়াকুব (আ:) এর পুত্র। হজরত ইউছুফ পরবর্তীকালে নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার নবুয়ত প্রাপ্তি ও পূর্ব জীবনের দু:খময় ঘটনা ছিলো আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ধরনের পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় হজরত ইউছুফ উত্তীর্ন হয়েছিলেন । ভাইদের ষড়যন্ত্র ও জোলেখা প্রমুখ রমনীদের ছলনা থেকে আল্লাহ তাকে মুক্ত করে এক মিসরের রাজত্ব দান করেছিলেন। এ থেকে বিশ্বাসী মানুষের অনেক শিক্ষনীয় রয়েছে । এ কাহিনী অনেক আছমানী কেতাবে রয়েছে।হজরত ইউছুফ (আ:) এর ভাইদের সংখ্যা ছিলো মোট এগারো জন। দশজন তার বৈমাত্রিয় ভাই। শুধু বনি আমিন তার সহোদর।

৬. এভাবেই মনোনীত করবেন তোমাকে তোমার প্রভু (প্রেরিত পুরুষ রূপে),
আর শেখাবেন স্বপ্ন বৃতান্ত যত ,
পরিপূর্ন করে দেবেন আরো তাঁর অনুগ্রহ অপার
তোমার আর ইয়াকুবের বংশবৃন্দের উপর ,
বিগত পূর্বে যেমন পূর্ন করেছেন অনুগ্রহ তাঁর
তোমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম আর ইসহাকের উপর।
নিশ্চিত তোমার প্রভু সর্বজ্ঞ মহাবিজ্ঞানী।
(২)
৭. ইউছুফ আর তার ভ্রাতাদের কাহিনীতে
থেকে গেছে জিজ্ঞাসুদের অনেক নিদর্শন।

৮. স্মরনীয় আরো  ,
তারা (ভ্রাতারা) যখন পরষ্পরে কথা বলেছিলো ঃ
পিতার কাছে প্রিয়তর ইউছুফ আর তার সহদোর আমাদের চেয়ে।
যদিও আমরা সংখ্যাধিক্য একটি দল ,
সুনিশ্চিত রয়েছেন পিতা পষ্ট ভ্রান্তিতে।

৯. অতএব ইউছুফকে নিহত করো ,
অথবা ফেলো আসো তাকে দূর কোন খানে।
তাহলে পিতার প্রসন্ন দৃষ্টি তোমাদের উপর পতিত হবে।
অত:পর তোমরা সৎশীল হয়ে যেও।

১০ তাদের মধ্য হতে কোন একজন বলে দিলো ঃ
ইউছুফকে হত্যা না করে বরং ফেলে দাও কোন গভীর কুপে।
হয়ত পথিকজন তুলে নিয়ে যাবে তাকে ,
একান্তই তোমরা যদি কিছু করতে চাও।

১১.      পিতার কাছে জানালো তারা : হে পিতা আমাদের ,
  কেন যে আমাদের বিশ্বাস করো না ইউছুফের বেলায় ,
যদিও আমার মঙ্গল আকাংখী তার ?

১২.      তাকে পাঠিয়ে দাও ( হে পিতা ) আমাদের সাথে আগামী কাল ,
সেখানে সে খাবে ফল ফলাদি আর সানন্দে করবে খেলা ,
আমরা রবো তার পরিপূর্ন রক্ষক।

১৩.      জানালো ই্য়াকুব ঃ তোমরা তাকে সাথে নিয়ে যাবে ,
এ ভেবে কষ্ট পাই মনে ,
আরো শংকিত হই - খেয়ে নেবে তাকে নেকড়ে শার্দূল ,
তার প্রতি তোমরা অমনোযোগী হলে।

১৪.   আমরা পূর্ন এক বলশালী দল ,
তা সত্বেও নেকড়ে যদি খেয়ে ফেলে তাকে,
তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো নিজেরাই।

১৫.   অনন্তর তাকে নিয়ে গেলো তারা ,
          মনস্থির হলো ঃ গভীর কোন অন্ধ কুপে ফেলে দেবে তাকে।
সেই ক্ষনে আমি ঐশী বানীতে জানিয়ে দিলাম তাকে ঃ
তাদের এ কৃতকর্মের কথা তুমি জানাবে তাদের ,
তোমাকে তারা চিনবে না যখন।

১৬.  রাত্রির প্রথম প্রহরে পিতৃ সমীপে এসে দাঁড়ালো তারা ক্রন্দন রত ,

১৭. কম্পিত কন্ঠ তাদের -  হে জনক আমাদের ,
মগ্ন বিভোর ছিলাম আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতায়
রসদ সম্ভারের কাছে তাকে রেখেছিলাম ,
এরপর নেকড়ে এসে খেয়ে গেলো তাকে।
তবুও তো পিতা প্রত্যয়ী হবে না তুমি আমাদের উপর ,
যতই আমরা সত্যভাষী হই না কেন।

১৮.   সংগে করে এনেছিলো তারা কৃত্রিম রক্তে রঞ্জিত তার পোষাক কাপড় ,
জানালো ইয়াকুব - গড়েছো তোমরাা এক কল্পকাহিনী মনোমত করে।
অতএব শ্রেয় আমার ধৈর্য ধারন ,
একমাত্র আল্লাহ আমার সহায়ক তোমাদের কথিত বিষয়ে।

১৯.          এলো মিসরবাসী এক যাত্রিক কাফেলা ,
  সে কুপের নিকটে পাঠালো তারা জলবাহী নিজেদের লোক
জলের জন্যে কুপে নামালো সে তার ডোল ,
তারপর সে জানালো - আহা ! কি শুভ সংবাদ !
এ যে অপরূপ কিশোর বালক !
অত:পর লুকালো তাকে পন্যের সাথে।
আল্লাহ ছিলেন তাদের কাজ সবিশেষ জ্ঞাত।

২০. এরপর তাকে বিক্রয় করে দিলো তারা
নগন্য কয়েক মুদ্রার বিনিময়ে ,
নির্লোভ ছিলো তারা তার প্রতি।
(৩)
২১. মিসরবাসী যে জন কিনেছিলো তাকে,
জানালো সে স্বীয় পত্নী - সস্মানে রেখে দাও একে ,
হয়ত সে হবে আমাদের পরম উপকারী ,
নয়তবা পুত্র রূপে তাকে করবো গ্রহন।।
( ভাষ্য আল্লাহর ) ঃ
আর এ ভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছি তাকে সেই ভূখন্ডে ,
শেখাবো বলে স্বপ্ন বৃত্তান্ত তাকে।
অপ্রতিহত আল্লাহ তাঁর কার্য সাধনে ,
জানে না তা অধিকাংশ মানুষ।

২২ যখন সে উপনিত হলো পরিপূর্ন যৌবনে ,
প্রবল ধী-শক্তি দিলাম তাকে আর প্রভূত প্রজ্ঞা জ্ঞান।
সৎশীলদের পুরস্কৃত করি এভাবেই আমি।

২৩. আশ্রিত সে গৃহের রমনী জোলেখা
কু-বাসনা পূরনের মিনতি জানালো তাকে ,
রুদ্ধ করে দিলো ঘরের সকল দুয়ার ,
তারপর জানালো আমন্ত্রন ঃ তোমাকেই ডাকি ,
এসো হে প্রিয়তম ! ( কামনা চরিতার্থ করি )।
জানালো ইউছূফ ঃ আমি আশ্রয় প্রার্থী আল্লাহর।
তোমার স্বামী তো মনিব আমার ,
আমাকে কত উত্তম সমাদরে রেখেছেন তিনি।
সফল হয়না অনাচারীরা।

২৪. গভীর আসক্ত সে হয়েছিলো তার প্রতি ,
অনুরূপ আসক্ত ইউছূফও হতো ,
যদি না সে দেখতো চোখে প্রভুর পষ্ট দলিল।
এ ভাবে তাকে প্রদান করেছি জ্ঞান ,
দূরে থাকে যেন অশ্লীল মন্দ কর্ম হতে।
সেতো ছিলো অন্তর্ভুক্ত বিশুদ্ধ চিত্ত বাঞ্চিত দাসের।

২৫.         উভয়েই ধাবিত হলো দরজার দিকে ,
  টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলো রমনী বসন তার পশ্চাদ্ভাগ হতে।
দেখলো তারা রয়েছে দাঁড়িয়ে রমনীর স্বামী দরজার কাছে।
স্বামীর কাছে অভিযোগ জানালো নারী ঃ
কুকর্মের কামনা করে যে পুরুষ তোমার স্ত্রীর সাথে ,
কারারুদ্ধ করা অথবা যে কোন মর্ম বিদারি কঠিন যাতনা ছাড়া
কি এমন দন্ড প্রাপ্য হতে পারে তার ?

২৬. জানালো ইউছূফ ঃ  সেই তো আমা হতে করেছিলো কুকর্ম কামনা ,
        এ সময়ে সাক্ষী দিলো জনৈক জন রমনীর পরিবার হতে -
        যদি ছিন্ন হয়ে থাকে জামা সম্মুখ দিক হতে ,
        তবে সত্যভাষিনী এ রমনী ,
        আর মিথ্যাবাদী এ (অভিযুক্ত ) পুরুষ।

২৭. আর যদি জামা ছিন্ন হয়ে থাকে পশ্চাদ্বিগ হতে ,
        তবে মিথ্যা বলেছে এ রমনী  ,
        সত্যবাদী এ পুরুষ।

২৮. অত:পর স্বামী তার দেখে নিলো ছিঁড়েছে জামা পশ্চাদ্বিগে।
মন্তব্য তার ঃ এ তো চক্রান্ত তোমাদের (রমনীকুলের ) ,
 তোমাদের ছলনা অবশ্যই মহাভয়ংকর।

২৯. হে ইউছূফ ! ভুলে যাও এ প্রসঙ্গ তুমি।
আর ক্ষমা প্রার্থিনী হও তুমি হে রমনী !
নিশ্চিত তুমি পূর্ন অপরাধী।
(৪)
৩০. নগরবাসিনী কতিপয় নারীর ভাষ্য ছিরো এই ঃ
অসৎ সংগ মাগিছে আজিজ পতœী এক কৃতদাস যুবকের ,
মজিছে সে তার উন্মত্ত প্রেমে।
আমরা দেখছি তাকে এক পষ্ট ভ্রান্তিতে।

৩১.   যখনই এলো আজিজ পতœীর কানে এ সব বিদ্রুপ কথা ,
ডেকে পাঠালো তাদের লোক মারফৎ ,
বানালো তাদের জন্য এক ভোজ সমাবেশ ,
হাতে হাতে দিলো তাদের প্রত্যেকে এক একটি ধারালো ছুরিকা ,
তারপর দিলো নির্দেশ ঃ হে যুবক দাস !
উপস্থিত হও সম্মুখে তাদের ।
স্বচক্ষে দেখলো যখন রমনীরা তাকে ,
বিমোহিতা (মূর্চ্ছাতুরা) হলো অপরূপ রূপে তার।
কেটে দিলো তার নিজ হস্ত তাদের।
উচ্চারিত হলো কণ্ঠে তাদের ঃ
কি অপূর্ব অদ্ভুত মহিমা আল্লাহর !
এ তো নয় মনুষ্য কোন , সম্ভ্রান্ত মহান ফেরেশতা পুরুষ।

৩২.   বললো রমনী তাদের ঃ এ তো সেই পুরুষ ,
যাকে নিয়ে ছুঁড়েছো তোমরা নিন্দা কটূক্তি আমার প্রতি।
তাকে ডেকেছি কাছে মনোবাসনা পুরাতে আমার।
অথচ সে থেকেছে পবিত্র অকলূষ ,
তবে সে যদি আমার আদেশ অমান্য করে ,
হবে নিশ্চিত কারাবাসী , লাঞ্চিত নিগৃহিত ইতর সদৃশ।

৩৩.   আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালো ইউছূফ ঃ
প্রভু হে আমার !
এ সব রমনী যার দিকে আমাকে আহ্বান করে এরা ,
(কুমনোকামনা  পুরাতে তাদের ),
তা হতে শ্রেয় মানি রুদ্ধ কারাগার ,
তুমি যদি রক্ষা আমাকে না করো তাদের বিছানো চক্রান্ত হতে ,
তবে (যে কোন মুহূর্তে ) আমি আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারি তাদের প্রতি।
    আর মূর্খদের  দলভুক্ত হয়ে যেতে পারি।

৩৪.   অত:পর গৃহিত হলো প্রার্থনা তার ,
ছিন্ন করে দিলেন তিনি কুচক্রী নারীদের চক্রান্ত জাল।
সর্বশ্রোতা তিনি অতিশয় জ্ঞানী।

৩৫.   বিবিধ নমুনা দেখে তার ভেবে নিলো যৈাক্তিক ,
কারারূদ্ধ কারা হোক কিছুকাল তাকে।
(৫)
৩৬. এরপর দুই যুবকের সাথে সে এলো কারাগারে।
তাদের একজন জানালো স্বপ্ন কথা ঃ
দেখেছি আমি নি:সরন করছি শারাব পেষিত দ্রাক্ষা হতে।
অপরজন জানালো তার স্বপ্ন বিবরন ঃ
দেখেছি আপন মস্তকে বহন করছি রুটি ,
তা হতে ভক্ষন করছে বিহঙ্গকুল ,
তুমি ( হে ইউছূফ !) জানিয়ে দাও আমাদের স্বপ্ন বৃত্তান্তগুলো।
প্রতিভাত হয় তুমি সৎকর্মশীল।

৩৭.   জানালো ইউছূফ ঃ তোমাদের প্রাপ্য যে খাদ্য খাবার ,
তা তোমাদের কাছে পৌঁছার আগেই
বলে দেবো আমি তোমাদের স্বপ্ন তত্ত্বগুলো ,
সেই জ্ঞান হতে , যা শিখিয়েছেন আমার পালক।
আমি তো পরিত্যাগ করেছি  ওদের ধর্মমত ,
আল্লাহকে যারা করে না বিশ্বাস ,
আর থেকে গেছে অবিশ্বাসী পরলোকেও।

৩৮.   মেনে চলি আমি
পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম ইছহাক আর ইয়াকুবের ধর্মমতবাদ।
এ নয় কর্তব্যআমাদের আল্লাহর সাথে অন্য কোন অংশিদার করা।
এওতো আল্লাহর অনুগ্রহ অপার
  সমগ্র মানব জাতি আর আমাদের প্রতি।
অথচ অকৃতজ্ঞ থেকে যায় অনেক মানুষ।

৩৯. হে আমার কারা সংগীরা ,
শ্রেয় কি অনেক প্রতিপালক ?
নাকি এক পরাক্রান্ত আল্লাহ ?

৪০.    তোমরা তো আরাধনা করো তাকে ছাড়া
অনেক কল্পিত নামের ,
          যে সব নাম রেখেছো তোমরা আর তোমাদের পিতৃপুরুষ।
অথচ তাদের বিষয়ে আল্লাহ দেননি কোনই দলিল।
একমাত্র আল্লাহই অধিকারী হুকুম দেবার।
নির্দেশ তাঁর ঃ তাকে ভিন্ন আরাধনা করো না কারো ,
এটাই সঠিক সহজ ধর্মমত।
অথচ অবগত নয় অনেক মানুষ।

৪১. হে সহকারাবাসী ! কথা হলো এই ,
তোমাদের মধ্য হতে অবশ্যই একজন করাবে মদ্যপান স্বীয় প্রভুকে।
আর অপরজন শূলবিদ্ধ হবে ,
তারপর পাখীরা করবে আহার তার মস্তক হতে।
তোমাদের যা কিছু জানবার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এই রূপে তার।

৪২.   যে ছিলো সম্ভাব্য মুক্তির পথে , ইউছূফ জানালো তাকে ঃ
আমার কথা তোমার প্রভুর গোচরে এনো ,
অনন্তর শয়তান প্রভুর কাছে জানাবার সে কথা তার
বিস্মৃত করে দিলো।
অতএব কয়েক বর্ষ আরো ইউছূফ থেকে গেলো কারাগারে।
(৬)
৪৩. (রাজদরবারে ) জানালো মিসররাজ ঃ
স্বপ্ন দেখেছি আমি Ñ
কৃষকায় গাভী সাত ভক্ষন করিছে পুষ্ট সাতটিকে ,
দেখেছি আরো Ñ
সাতটি সতেজ শষ্যশীষ সাতটি শুষ্ক শষ্যশীষের পাশে।
হে সভাসদগন !এ সব স্বপ্ন বৃত্তান্ত জানাও আমাকে ,
স্বপ্ন বৃত্তান্ত ব্যাখ্যাতে তোমরা সক্ষম হও যদি।

৪৪.   বলে দিলো তারা ঃ এতো অর্থহীন স্বপ্ন কল্পনা ।
আমরা এমন অর্থহীন স্বপ্ন ব্যখ্যায় অভিজ্ঞ নই।

৪৫.   সেই কারাবন্দী দুজনের মুক্ত যেজন ,
          দীর্ঘকাল পরে মনে পড়ে গেলো তার ইউছূফের কথা ,
সর্ব সমক্ষে জানালো সেজন ঃ
দিতে পারি স্বপ্ন ব্যাখ্যার সঠিক বারতা ,
অতএব আমাকে পাঠিয়ে দাও ( সেই কারাগারে )।

৪৬.   ইউছূফের কাছে এসে জানালো সেজন :
হে ইউছূফ ! সত্যসাধক !
বলে দাও স্বপ্ন ব্যাখ্যা এর -
জীর্ন শীর্ন সাতঠি গাভী করিছে ভক্ষন স্বাস্থ্যবতী পুষ্ট সাতটিকে ,
আরো রয়েছে সাতটি সতেজ সবুজ শীষ ,
অপর সাতটি বিশুষ্ক কেবল।
আমি যেন ফিরে যেতে পারি
সেই লোকজন (রাজা আর সভাসদ )মাঝে ,
জানতে পারে তারা যাতে স্বপ্নের বৃত্তান্ত তাবৎ।

৪৭.   জানালো ইউছূফ ঃ সাতটি বছর ফলবে যে শষ্য -ফসল একাধিক্রমে ,
   সংগ্রহ করে রেখে দেবে তাকে শীষ সহকারে ,
         তা থেকে ভক্ষন করবে অল্প যা কিছু , তা ব্যাতিরেকে।

৪৮.   নেমে আসবে এরপর সাতটি বছর খরা আকালের কঠিন সময় ,
ভক্ষন করবে লোক এ সাতটি বছর যা কিছু পূর্বে সঞ্চিত তাদের ,
সামান্য কিছু রেেেখ দেবে (বীজ) ফসলের কাজে।

৪৯. এরপর সমাগত হবে আরেকটি বছর ,
নামবে যাতে আকাশের মুষল বৃষ্টিধারা মানুষের কল্যানে ,
  দ্রাক্ষা ফলের রস নিংড়াবে মানুষ (আনন্দ বিলাস)।
(৭)
৫০. এলো রাজার নির্দেশ ঃ
নিয়ে এসো তাক সম্মুখে আমার ,
অত:পর পৌঁছে গেলো দূত ইউছূফের কাছেসে বার্তা নিয়ে।
জানালো ইউছূফ ঃ ফিরে যাও দূত স্বীয় প্রভুর কাছে ,
জিজ্ঞেস করো তাকে ঃ
যে সব নারী কেটেছিলো নিজেদের হাত ,
কি অবস্থা এখন তাদের ?
পরিপূর্ন অবগত আমার পালক তাদের চক্রান্ত ছলনা।

৫১. নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা রাজার ঃ
কি এমন হয়েছিলো তোমাদের ?
তোমরা যখন অসৎ কামনা করেছিলে ইউছূফের কাছে ?
জবাব তাদের ঃআল্লাহর এক অপূর্ব মহিমা ,
কোন স্খলন আমরা দেখিনি তার ।
আজিজ ¯ী¿র বিনীত উচ্চারন ঃ
এখন তো প্রকাশিত সব সত্য ঘটনা ।
আমিই তো করেছিলাম অসৎ কামনা তাকে ,
নিশ্চিত সে তো সত্যবাদী পুরুষ।

৫২.      ইউছূপের ভাষ্য এই ঃ
এ সব বলেছি যাতে জানুক আজিজ ,
ভাংগিনি বিশ্বাস আমি তার অসাক্ষাতে ,
(আঘাত করেনি তার কুল সম্মানে )
সফল করেন না আল্লাহ বিশ্বাস -বিনাশীদের কোনই চক্রান্ত।
(১৩)
৫৩. নিজেকে নির্দোষ ভাবিনা আমি ,
মন্দ কর্মকামী মানুষের মন ,
তবে সে মন নয় , যে পেয়েছে আমার প্রভুর অনুগ্রহ অপার।
পরম দয়ালু আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল।

৫৪.      রাজার নির্দেশ ঃ আমার নিকটে নিয়ে এসো তাকে ,
করবো তাকে আমার বিশ্বস্ত সহচর ।
এরপর তার সাথে বাক্যালাপ শেষে
জানালো রাজা ঃ
আজ হতে তুমি আমাদের সম্মানিত বিশ্বাস ভাজন।

৫৫. ইউছূফের আবেদন ঃ
আমাকে করো রাজা এ দেশের কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ।
আমি হবো তার বিশ্বস্ত রক্ষক , অভিজ্ঞও বটে।

৫৬. এ ভাবেই ইউছূফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছি আমি ,
সে যেন সেখানে মনোমত করে বাস।
আমি যাকে ইচ্ছা দান করি অনুগ্রহ আমার ,
নস্যাৎ করি না সৎশীলদের শ্রম ফলাফল।


৫৭. পরজীবনের প্রাপ্য তাদের অনেক শ্রেয় ,
বিশ্বাসী আর আল্লাহ ভীরু যারা।
(৮)
৫৮. (অকাল সংকটে ) ইউছূফের ভ্রাতাবর্গ উপস্থিত হলো তার কাছে
(খাদ্যশষ্য ক্রয় নিমিত্তে ),
চিনে নিলো ইউছূফ তাদের  ,
অথচ তারা চিনতে পারেনি তাকে।

৫৯.      এরপর সামগ্রীর সুব্যবস্থা করে দিলো  ইউছূফ যখন ,
জানালো সে তাদের ঃ
নিয়ে এসো তোমাদের বিমাতা ভাই বনি আদমকে
পিতার নিকট হতে।
 তোমরা কি দেখো না পরিপূর্ন মেপে দেই আমি ( প্রতি অংশ হতে )?
আমি এক উত্তম অতিথি সেবক ?
৬০.      আর তোমরা তাকে আমার কাছেতে না আনো যদি ,
রবে না তোমাদের নির্ধারিত শষ্যরসদ আমার ভান্ডারে।
আমার নিকটে তোমরা এসো না আর।

৬১.      জানালো তারা ঃ এ ব্যাপারে চেয়ে নেবো পিতার সম্মতি ,
আর নিশ্চিত আমরা এতে সক্ষম হবো।

৬২.      ইউছূফ ভৃত্যদের দিলো নির্দেশ ঃ
পন্য মূল্য বাবদ তাদের যে পুঁজি
দ্রব্য সম্ভারে তাদের রেখে দাও গোপনে ,
বুঝে নিতে পারে যেন তারা  ,
প্রত্যর্পন করা হয়েছে তাদের সমুদয় পুঁজি  ,
অনন্তর তারা যেন আসে পুনর্বার।

৬৩.      অত:পর ফিরে এসে তারা পিতৃ সমীপে জানালো আরজ ঃ
হে পিতা আমাদের ! নিষিদ্ধ হয়েছে আমাদের শষ্য রসদ ,
যদি  কনিষ্ঠ ভ্রাতাকে আমাদের সাথে  করেন প্রেরন ,
শষ্য রসদ আমরা পেতে পারি তবে।
অবশ্যই করবো তার পূর্ন হেফাজত।

৬৪.      উক্তি ইয়াকুবের ঃ
তার বিষয়ে আমি কি অনুরূপ বিশ্বাস রাখবো তোমাদের উপর ?
পূর্বে যে বিশ্বাস রেখেছিলাম আমি তার ভাতা ইউছূফের বেলায় ?
মহান আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষাকারী ,
সর্ব দয়াল হতে তিনি অধিক দয়ালু।
৬৫.      খুললো যখন তারা তাদের রসদ সম্ভার ,
দেখলো তারা Ñ ফেরৎ পাঠানো হয়েছে তাদের পন্যমূল্য সমুদয়।
সানন্দে বললো তারা ঃ হে জনক আমাদের !
এর বেশি আমরা কি আর চাইতে পারি !
প্রদত্ত আমাদের পন্যপুঁজি প্রত্যর্পন করা হয়েছে পুন আমাদের।
আমরা আবার এনে দেবো খাদ্য সম্ভার আমাদের পরিবার পরিজনে।
ভ্রাতার করবো আমরা পূর্ন সংরক্ষন ,
এক উষ্ট্র বোঝাই খাদ্যশষ্য এনে দেবো আরো ,
এনেছি যা কিছু সামান্য পরিমানে।

৬৬.      জানালো জনক তাদের ঃ
যাবৎ তোমরা না করো শপথ আল্লাহর নামে ,
এই বলে যে -
অবশ্যই ফিরিয়ে আনবে তোমরা তাকে আমার নিকট ,
তাবৎ আমি পাঠাবো না তাকে তোমাদের সাথে।
তবে একান্ত যদি বিপন্ন না হও তোমরা কখনো।
তারপর তারা পিতৃ সমীপে নিলো অংগিকার ,
জানালো তাদের পিতা ঃ
  আমাদের যা কিছু আলোচ্য কথন ,
সবকিছুর বিধায়ক আল্লাহই শুধু।

৬৭.      আরো সে জানালো ঃ হে আমার পুত্র সকল !
এক দরজায় প্রবেশ করো না নগরে ,
বিভিন্ন দুয়ায়ে যেও অভ্যন্তরে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে।
আমি অপারগ টলাতে আল্লাহর বিধান তোমাদের হতে।
যা কিছু বিধান সব আল্লাহর ,
তাঁরি উপর নির্ভর করি আমি ,
তাঁর উপরে তারাও নির্ভর করতে পারে ,
যারা নির্ভর করতে চায়।

৬৮.      পিতার আদেশ মত
           ঢুকে গেলো তারা যখন নগর অভ্যন্তরে ,
আল্লাহর বিধানের প্রতিক’লে সে কাজ এলো না
তাদের কোন উপকারে ,
অধিকন্তু ইয়াকুবের সিন্ধান্ত যা ছিলো ,
তা ছিলো তার একান্ত নিজের।
সে ছিলো নিশ্চিত মহাজ্ঞানবান ,
কেননা আমিই তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম।
অথচ অধিকাংশ মানুষ তা অবগত নয়।
(৯)
৬৯. যেই মাত্র সম্মুখবর্তী হলো তারা ইউছুফের ,
রেখে দিলো কাছে তার নিজ সহোদরে ,
একান্ত নির্জনে জানালো তাকে ঃ
আমি যে তোমার সহোদর ভ্রাতা ,
দু:খ করো না তাদের কৃত ব্যবহারে।

৭০.      তারপর সে যখন তৈরি করে দিলো তাদের রসদ স¤ভার ,
নিজ ভ্রাতার রসদ সম্ভারে রেখে দিলো রাজকীয় পানপাত্র এক।
অত:পর এক ঘোষকের কন্ঠে ঘোষিত হলো ঃ
হে কাফেলার যাত্রী সকল !
নিশ্চিত রূপে তোমরা যে চোর।

৭১. তাদের লক্ষ্য করে জানালো কাফেলার যাত্রী সকল ঃ
কি এমন তোমাদের হারিয়ে গেছে ?

৭২. ঘোষকের কথা ঃ হারিয়েছি আমরা রাজ পানপাত্র।
যে এনে দেবে সে পানপাত্র রাজার ,
পাবে সে এক উষ্ট্র পরিপূর্ন শষ্য সম্ভার ,
আমি যে যামিন হয়ে রইলাম তার।

৭৩. তাদের উত্তর ঃ শপথ আল্লাহর !
তোমরা তো জানো সবিশেষ ,
আসিনি আমরা এ রাজ্যে বাড়াতে বিবাদ ,
পরন্তু আমরা চোর নই কখনো।

৭৪. এলো প্রত্যুত্তর ঃ
প্রতিপন্ন হও যদি মিথ্যাবাদী রূপে ,
কি শাস্তি প্রাপ্য হবে সে চৌর্য কাজের ?

৭৫. বলে দিলো তারা ঃ
পানপাত্র পাওয়া যাবে যার রসদ সম্ভারে ,
নিজেই সে হবে বিনিময় ,
( প্রাপ্য শাস্তি তার -দাসবন্দী হবে )
এ ভাবেই করে থাকি শাস্তি বিধান অনাচারীদের।

৭৬. স্বীয়  অনুজের শষ্য আধার তল্লাসির আগে
প্রথমেই দেখে নিলো ইউছুফ
তার আপন ভাইদের শষ্য থলিয়াগুলো।
পরিশেষে সে পাত্র পাওয়া গেলো
স্বীয় অনুজের শষ্য থলিয়া হতে।
ইউছুফকে শেখালাম কৌশল এ ভাবে আমি ,
আল্লাহর ইচ্ছা না হলে সক্ষম হতোনা সে কখনো
ধরে রাখতে তার নিজ সহোদরে সে রাজ্যের রাজার কানুনে।
ইচ্ছা করি যাকে আমি সমুন্নত করি মর্যাদায় ,
সর্বোপরি জ্ঞানবান একজন সকল জ্ঞানবান হতে।

৭৭. ভাইদের ভাষ্য হলো ঃ সে যদি করে থাকে চুরি ,
বিগত পূর্বে তার অগ্রজ চুরি করেছিলো ,
তথাপি ইউছুফ নিজ অন্তরে রেখে দিলো প্রকৃত ব্যাপার
সম্মুখে তাদের প্রকাশ না করে।
মনে মনে তার উচ্চারিত হলো ঃ
এ ব্যাপারে তোমরা হীনতর আরো ,
তোমাদের বিবৃতি আল্লাহ সবিশেষ জ্ঞাত।

৭৮. ভ্রাতাদের আবেদন ঃ  হে আজিজ !
এর এক বৃদ্ধ পিতা বর্তমান ,
( অতিশয় স্নেহশীল এর প্রতি তিনি )
সে কারনে রেখে দাও আমাদের একজনে পরিবর্তে তার।
আমাদের চোখে তুমি বড়ই মহান।

৭৯. জানালো ইউছুফ ঃ হারানো সম্পদ পেয়েছি যার কাছে ,
তাকে ছাড়া অন্যকে ধরে রাখার অপরাধ হতে
আশ্রয় প্রার্থী আমরা আল্লাহর কাছে ,
তা নাহলে গন্য হবো অনাচারী রূপে।
(১০)
৮০. যখন তারা হলো সম্পূর্ন নিরাশ তার পক্ষ হতে ,
নির্জনে শুরু হলো তাদের পরামর্শ আলাপ।
তাদের মধ্যে বয়ষ্ক যে জন , বোঝালো সে ঃ
জানো নাকি তোমরা
তোমাদের পিতা নিয়েছেন তোমাদের দৃঢ় অংগিকার
আল্লাহর নামে ?
পূর্বেও তোমরা করেছো ইউছুফ সংক্রান্ত একই অপরাধ।
অতএব কোনক্রমেই এ দেশ ছেড়ে যাবো না আমি ,
যাবৎ না আমি পিতার অনুমতি পাই ,
অথবা যাবৎ না দেন অল্লাহ কোন সমাধান ,
তিনিই শ্রেষ্ঠ সমাধানকারী।

৮১.      প্রত্যাবর্তন করো তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ,
তারপর বলো ঃ হে আমাদের পিতা !
পুত্র তোমার করেছে চুরি ,
দিলাম যা জানি তার সত্য বিবরন।
অদৃশ্য ব্যাপার আমি জানি না কিছুই।

৮২.      সেই জনপদবাসীদের জিজ্ঞাসা করে দেখো
যেখানে আমরা ছিলাম।
আর জিজ্ঞাসা করো সেই কাফেলাকে
যার সহযাত্রী হয়ে এসেছি আমরা।
বিশ্বাস করো , অবশ্যই আমরা সত্যবাদী।

৮৩.      জানালো ইয়াকুব ঃ
না , এ সব তোমাদের কল্পিত কথা।
অতএব শ্রেয় আমার ধৈর্য ধারন ,
হয়ত আল্লাহ ফিরিয়ে দেবেন একত্রে তাদের ,
সর্ব জ্ঞানবান আল্লাহ মহাপ্রজ্ঞাময়।

৮৪.      তাদের দিক হতে মুখ অন্যত্র ফেরালো ইয়াকুব ,
কন্ঠে ধ্বনিত হলো ঃআফছোছ ! হায় ইউছুফ !
অনন্তর অন্ধ হয়ে গেলো দুটি চোখ তার পুত্র শোকে।
অসহ মনস্তাপে শোকাহত হলো সে।

৮৫.     পুত্রদের উক্তি এই ঃ শপথ আল্লাহর ,
তুমি শুধু ভাবো ইউছুফের কথা ,
যাবৎ না হও মুমূর্ষ প্রান ,
অথবা না করো মৃত্যু বরন।

৮৬.      জানালো জনক তাদের ঃ
আমার এ অসহ বেদনার ভার ,
দু:খ জ্বালা যত অভিযোগ
শুধু আল্লাহর কাছে নিবেদন করি।
আল্লাহর কাছ হতে যতটুকু জানি আমি ,
তাতো জানো না তোমরা।

৮৭.      হে পুত্রবর্গ আমার ! যাও চলে যাও ,
ইউছুফ আর তার অনুজের অনুসন্ধান করো।
নিরাশ হয়ো না আল্লাহর আশিষ হতে ,
অস্বীকারকারীরা শুধু নিরাশ হয়ে থাকে
আল্লাহর আশিষ হতে।

৮৮.      যখন এলো তারা (পুন) ইউছুফের কাছে ,
জনালো ঃ হে আজিজ !
দারূন কষ্টে আছি আমরা পরিবার পরিজন সহ ,
এনেছি সাথে নগন্য পন্য কিছু।
পরিপূর্ন শষ্যরসদ তবু দাও আমাদের দান মনে করে ,
প্রতিদান দেন আল্লাহ দানকারীদের।

৮৯.      জানালো ইউছুফ ঃ তোমরা কি জানো
কি আচরন করেছো তোমরা ইউছুফ আর তার ভ্রাতার সাথে ?
তোমরা যখন ছিলে নির্বোধ।

৯০.      বলে উঠলো তারা ঃ তবে কি তুমি সেই ইউছুফ ?
সে জবাব দিলো ঃ হাঁ ! আমি সেই ইউছুফ
বনি আমিন আমার অনুজ সহোদর ভ্রাতা।
অপার অনুগ্রহ আল্লাহর আমাদের প্রতি।
নিশ্চিত যারা সৎকর্মশীল আর ধৈর্য ধরে থাকে ,
বিনষ্ট করেন না আল্লাহ শ্রম ফল তাদের।

৯১.      জানালো তারা ঃ কছম আল্লাহর !
তোমাকে  প্রধান্য দিলেন আল্লাহ আমাদের উপর ,
নিশ্চিত আমরা ছিলাম বড় গোনাগার।

৯২.      জানালো ইউছুফ ঃ
না , আজ আর নেই কোন অভিযোগ তোমাদের প্রতি ,
ক্ষমা করুন  আল্লাহ তোমাদের ।
দয়ালুদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ দয়াল।

৯৩.      চলে যাও তোমরা পরিচ্ছদ সহ ,
আমার পিতার মুখমন্ডলে রেখে দিও এটি।
ফিরে পাবেন তিনি তার দৃষ্টি-জ্যোতি।
তারপর এসো আমার নিকটে সমগ্র পরিবার সহ।
(১১)
৯৪. অত:পর মিসর রাজ্য হতে কাফেলা যখন বের হলো পথে ,
জানালো জনক তাদের ঃ
যদি না আমাকে ভাবো অপ্রকৃতস্থ বাচাল ,
তবে বলি শোন Ñ ইউছুফের ঘ্রান পাই আমি।

৯৫. তাদের ভাষ্য তখন ঃ শপথ আল্লাহর !
নিশ্চিত রয়েছো তুমি পূর্ব ভ্রান্তিতে।

৯৬.      অনন্তর সুবার্তাবাহক এসে গেলো যখন ,
মুখমন্ডলে রেখে দিলো তার সেই জামাটি ,
ফিরে এলো তার দৃষ্টি -জ্যোতি।
বক্তব্য তার ঃ বলিনি কি তোমাদের ?
যতটুকু জানি আমি আল্লাহর পক্ষ হতে ,
তোমরা তা জানো না।

৯৭.     পুত্রগন জানালো মিনতি ঃ হে আমাদের পিতা !
ক্ষমা প্রার্থনা করো আমাদের কৃত অপরাধের ,
আমরা তো মহাঅপরাধী।

৯৮.     জানালো পিতা ঃ
তোমাদের ক্ষমা চাইবো সত্বর আমার প্রভুর কাছে ,
নিশ্চিত ক্ষমাকারী তিনি পরম দয়ালু।

৯৯.      অত:পর পৌঁছে গেলো যখন তারা ইউছুফের কাছে ,
বেঁধে নিলো আলিংগনে জননী জনকে ,
তারপর জানালো ঃ চলুন মিসর নগরে ,
আল্লাহর ইচ্ছাতে নিরাপদ এখন।

১০০. তারপর জননী -জনকে দিলো উচ্চাসন ,
সেজদাবনত হলো তারা সম্মুখে তার ,
জানালো ইউছুফ ঃ হে আমার পিতা !
এ ছিলো সেই স্বপ্ন বৃত্তান্ত ,
আমার প্রভু করেছেন তার সত্য রূপায়ন ,
আর অপার অনুগ্রহে তাঁর বের করে এনেছেন কারাগার হতে।
আমার আর ভ্রাতাদের মাঝে
শয়তার প্ররোচিত বিনষ্ট সম্পর্কের পরেও
তোমাদের এনে দিয়েছেন তিনি মরু অঞ্চল হতে।
যা কিছু করতে চান আমার প্রভু
করেন সে সব নিপূন ভাবে।
নিশ্চিত সর্বজ্ঞ তিনি মহাজ্ঞানবান।
                            -----------------------------------------------------------------------------------
১০০. সেজদাবনত হলো তারা সম্মুখে তার ।
হজরত ইউছুফ মিসরে পিতামাতাকে কাছে পেয়ে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে
তাদেরকে রাজাসনে বসালেন। এ সময় তার পিতামাতা সহ এগারো ভাই হজরত ইউছুফ (আ:)কে সম্মান দেখাতে সেজদাবনত হলেন। হজরত আদম (আ:))থেকে হজরত ঈছা (আ:) এর যুগ পর্যন্ত কাউকে সম্মান দেখানোর জন্য বা অন্য কোন কারনে সেজদা করা বৈধ ছিলো। হজরত মুহাম্মদ (ছা:) সময় মানুষকে সম্মান দেখানোর জন্য বা অন্য কোন কারনে সেজদা করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এক আল্লাহ ছাড়া কোন মানুষ কারো কাছে মাথা নত করতে বা সেজদা করতে পারবে না। হজরত ইউছুফ (আ:) জানালেন Ñ জীবনের প্রথমে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাতে ছিলো এগারোটি নক্ষত্র আর চন্দ্রসূর্য তাকে সেজদা করছে । আজ তার সত্য রূপায়ন ঘটলো। এগারো জন ভাই হলো এগারোটি নক্ষত্র। বাবা মা চন্দ্র সূর্য।

১০১. হে পালক আমার ! এক সম্রাজ্য দিয়েছো আমাকে ,
শিখিয়েছো স্বপ্ন বৃত্তান্ত ,
হে পৃথিবী আর আকাশের মহান সৃজক !
ইহকাল আর  পরকালে আমার কর্মবিধায়ক ,

১০২.     এ তো বারতা এক অদৃশ্য কাহিনীর ,
(হে মুহাম্মদ) , জানালাম তোমাকে ঐশীবানী করে।
তুমি তো তাদের মধ্যে ছিলে না তখন ,
যখন তারা এক মতে মনস্থির করেছিলো ষড়যন্ত্রকালে।

১০৩. যতই কামনা করো না কেন ,
অধিকাংশ লোক বিশ্বাসী নয়।

১০৪.     তুমি তো করো না দাবী তাদের কাছে কোন বিনিময়।
এ তো তাবৎ বিশ্বের এক (শ্রেষ্ঠ) উপদেশ।

১০৫. নভমন্ডলে আর পৃথিবীতে রয়েছে অনেক নিদর্শন ,
যার উপর তারা করে বিচরন ,
অথচ এ সবের প্রতি তারা ঘোর উদাসীন।

১০৬.     আল্লাহতে বিশ্বাস করে তাদের অনেকে ,
অথচ করে তারা তাঁর অংশীদার।

১০৭. তবে কি  নিশ্চিত নিরাপদ তারা
আল্লাহর সর্বগ্রাসী কঠিন দন্ড হতে ?   অথবা অকস্মাৎ কেয়ামত আসবে তাদের উপর ?
সে কথা বুঝে না তারা।

১০৮. বলে দাও হে রাছুল ঃ
এই তো আমার পথ ,
আমি আর আমার অনুসারীগন আহ্বান করি
আল্লাহর পথে সজ্ঞান বিশ্বাসে ,
পবিত্র মহান আল্লাহ ।
তাঁর অংশীবাদী যারা , তাদের আমি দলভুক্ত নই।

১০৯.     বিগত পূর্বে তোমার পাঠিয়েছি অনেক পুরুষ
বিভিন্ন জনপদ হতে ,
প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছি তাদের কাছে।
পরিভ্রমন করেনি কি তারা পৃথিবীতে ?
দেখেনি কি তারা কি পরিনাম হয়েছিলো তাদের পূর্ববর্তীদের ?
সতর্ক সৎ যারা তাদের জন্য শ্রেয় পরলোক।
তোমরা কি তার বুঝ না কিছুই ?

১১০.     পরিশেষে আশাহত হলে প্রেরিত পুরুষগন ,
ভেবে নিলো অবিশ্বাসী জনতা ,
মিথ্যা আশ্বাস তাদের দেয়া হয়েছিলো এতকাল ,
এসে গেলো তাদের কাছে সাহায্য আমার ,
আমি ইচ্ছা করি যাকে , সেই বেঁচে যায়।
কখনো হয় না রদ ভয়াল দন্ড আমার পাপী সম্প্রদায় হতে।

১১১.     তাদের কাহিনীগুলোতে  রয়েছে শেখার অনেক
বোধশক্তিধর বুদ্ধিমানের।
কোরআনের এ ঐশীবানী নয় কল্পিত রচনা কোন।
এ তো হলো সেই বিশ্বাসীদের পূর্ব গ্রন্থে কথিত যাকিছু
তার সমর্থন , সমস্ত কিছুর ব্যাখ্যা বিশদ ,
আর পষ্ট পথ প্রদর্শন , বিশ্বাসীদের অনুগ্রহ পরম।

[ ছুরা ইউছুফ সমাপ্ত ]

Latest posts