-->

সৈয়দপুর সরকারী কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের "স্মৃতিকথা" প্রফেসর মুহাম্মদ মনসূর উর রহমান




প্রফেসর মুহাম্মদ মনসূর উর রহমান 
প্রাক্তন ভার প্রাপ্ত অধ্যক্ষ    
স্মৃতিকথা

...............................................................................................................................................................................................................
সৈয়দপুর টেকনিকাল কলেজে আমার অনেকগুলো দিন ও বেশ কয়েকটি বছর কেটেছে। এ সময়কালের অনেক কথা আনেক ঘটনা অনেক কাজ স্মৃতি হয়ে আছে। আজ বলতে চাইলে সব বলা যাবে না। সময়ের স্বল্পতা, জীবনের ব্যস্ততা। তবুও তার কিছু ঘটনা উল্লেখ করছি।

অধ্যাপনা জীবন শুরু করেছিলাম ছাত্র জীবনের সমাপ্তি না হতেই। মাষ্টার্স পরীক্ষা পুরো শেষ না হওয়ার আর ফল প্রকাশ না হওয়ার আগে বাংলা অধ্যাপক হিসাবে পার্বতীপুর কলেজে যোগ দিয়েছিলাম ১৯৬৮ সালের শেষ ভাগে। দুবছর শেষ না হতেই দেশে শুরু হয়েছিলো স্বাধীকার ও স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চাকুরি ছেড়ে জড়িয়ে পড়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সাথে। প্রথমত দেশের ভেতরে কিছুদিন মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকার পর ভারতের পতিরাম ইউথ ক্যাম্পে ছাত্রসংগঠক ও প্রশিক্ষক হিসাবে যোগ দেই। এটা ছিলো মুক্তি যোদ্ধাদের প্রশিক্ষন ক্যাম্প । প্রতি ব্যাচে ১৮শ মুক্তি যোদ্ধা প্রশিক্ষনার্থী থাকতো ।৫টি শ্রেনীতে বিভক্ত ছিলো ছাত্ররা। এদের ক্লাস নিতে হতো। যুদ্ধ শেষে আবার পার্বতীপুর কলেজে যোগ দিলাম ১৯৭২ সালের প্রথমে । তারপর ঐ বছরের শেষের দিকে বগুড়া আজিজুল হক সরকারী কলেজে বাংলা প্রভাষক হিসাবে যোগদান করলাম। বগুড়া আজিজুল হক কলেজে দেশের সর্ব প্রথম স্বনির্ভর আন্দোলন শুরু হলে, তার সাথে জড়িত হলাম। কারন উদ্যোক্তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তা সত্বেও ১৯৭৫ সালের শেষে বদলি হয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজে বাংলা বিভাগে যোগ দিলাম। ১৯৭৯ সালে আমার এক সহকর্মীর রিলিভার হিসাবে সৈয়দপুর টেকনিকাল কলেজে আমাকে বদলি করা হলো। অনিচ্ছা সত্বেও টেকনিকাল কলেজে বাংলা বিভাগে যোগ দিতে হলো। নিয়োগ পত্র পাওয়ার আগে এ কলেজ সম্পর্কে আমার কোন ধারনা ছিলো না।  জানলাম - ১৯৬৫ সালে এ প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক কারিগরি বিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।প্রথমে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পাঠ দান শুরু হয়।১৯৬৯ সালে এ সব ছাত্ররা প্রথম এস এস সি পরীক্ষা দেয়। ১৯৭৭ সালে একে উচ্চমাধ্যমিক কলেজে উন্নত করা হয়।

টেকনিকাল কলেজে যোগ দিয়ে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। একে তো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এসেছি, তারপর কলেজ শাখায় ছাত্র সংখ্যা একে বারে কম।মাত্র ১৫/১৬ জন। তাও আবার ক্লাসে অনিয়মিত। এ সময় অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন ড: মুহাম্মদ তমিজুল হক। তিনিও কারমাইকেল কলেজ থেকে এসে ছিলেন । প্রথম দিনে তিনি আমাকে বললেন- আপনি এসছেন আমি এখন যাবো । আপনাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি কি সত্যি সত্যি এখানে থেকে বদলির ব্যবস্থা করছেন? তা জানতাম না। মনটা আমার এমনিতে অস্বস্তিতে ভরে ছিলো, আমি সরাসরি না বলে দিলাম , আমি দায়িত্ব নিতে পারবো না, তিনি কিছু বিরক্তিভাব প্রকাশ করে বললেন- তা হলে আমি কি যাবো না। এ ব্যাপারে তিনি ডিজিকে জানালেন । ডিজি কৈফিয়ত চাইলেন। কয়েকটা অজুহাত দেখালাম। তিনি আমার পরবর্তী জনকে দায়িত্ব দিতে বললেন। ড: তমিজুল হক অংকের প্রভাষক জনাব শাইদুর রহমানকে দয়িত্ব দিয়ে চলে গেলেন।

একটা অস্বস্তির মধ্যে ক্লাস নিতে থাকলাম। সরকারী কলেজে ছাত্র সংখ্যা এত কম কেন? ভাবলাম বাইলজি না থাকার কারনে এমনটা হয়েছে। উপরে আবেদন নিবেদন জানিয়ে নাকি কোন কাজ হয়নি।

জনাব শাইদুর রহমান অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে কলেজ শাখার শিক্ষকদের স্কুল শাখায় ক্লাস নেয়ার আদেশ জারি করেন। স্কুল কলেজ শাখার পার্থক্য দূর করার জন্য হয়ত এ প্রচেষ্টা। তিনি এসছিলেন সরকারী মডেল স্কুল থেকে ।কলেজ শাখার শিক্ষকরা আসম্মতি জানালো। হরিধন বাবু পদার্থের প্রভাষক , সরাসরি না বলে দিলেন। আমিও জানিয়ে দিলাম আমার দ্বারা এ কাজ সম্ভব নয়।  এতে একটা তিক্ততার পরিবেশ সৃষ্টি হলো। এবার সাইদুর রহমান সাহেব কলেজ ছাত্রদের স্কুল ছাত্রদের মত ইউনিফর্ম পরিধান করার নির্দেশ প্রদান করলে কলেজ ছাত্ররা তার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন শুরু করে। সাইদুর রহমান এতে রাগান্বিত হয়ে ক্লাসরুমে তালা লাগিয়ে দিলেন। এদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব লুৎফর রহমান সাহেবের সাথে কথা কাটাকাটির ফলে এস এস সি আর এইচ এসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হলো।সৈয়দপুর ডিগ্রী কলেজে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিলেন। কলেজে একটা স্থবির অবস্থা দেখা দিলো। এ সময় জনাব সাইদুরর রহমান  সহকারী অধ্যাপক হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে দিনাজপুর কলেজে চলে গেলেন।

কিছুটা বাধ্য হয়ে আমাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে হলো। কারন পরবর্তী ব্যক্তি আমার ছাত্র ইংরেজী প্রভাষক জনাব সিরাজুল ইসলাম। আমি থাকতে সিরাজুল ইসলাম দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করলো। তাছাড়া সিনিয়র শিক্ষকরা দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমাকে সবিশেষ অনুরোধ জানালেন। অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষকদের নিয়ে একটা মতবিনিময় সভা ডাকলাম। যাতে শিক্ষকদের মনের দূরত্ব কমে আসে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলো। আমি বললাম কলেজ শিক্ষকরা ইচ্ছা করলে স্কুল শাখার ক্লাস নিতে পারেন। এটা বাধ্যতামূলক নয়। কিছু শিক্ষক  এতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এর পর ভাবলাম কলেজের অনেক সংস্কার মূলক কাজ বাকি আছে। কয়েকজন সিনিয়ার শিক্ষককে নিয়ে বসলাম ।তাদেরকে বললাম- কি ভাবে কলেজের উন্নয়নমূলক কিছু কাজ কার যায়। আপনার কাজ গুলো চিহ্নিত করুন। আর কি ভাবে ছাত্র সংখ্যা বাড়ানো যায় আর সে সম্পর্কে ভাবুন। 
অগ্লাধিকার ভিত্তিতে যে কাজগুলো করা যায় তার একটা তার একটা তালিকা তৈরি করতে বললাম। তারা কাজের  একটা তালিকা পেশ করলো। (১) ছাত্র সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বাইওলজি বিষয় খোলার ব্যবস্থা করা।(২)এস এইচ এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র ফিরিয়ে আনা।(৩) বন্ধ পানি সরবরাহ চালু করা। (৪)জরাজীর্ন  ও বন্ধ ছাত্র নিবাস মেরামত ও চালু করা।(৫) অসমাপ্ত অধ্যক্ষ ভবনের কাজ সমাপ্ত করা এবং কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মান সহ মূল ভবনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা । (৬) কলেজ মিলনায়তন সম্প্রসারন করা ও মিলনায়তনে একটি স্টেজ  তৈরি করা । (৭) মাছজিদ নির্মানের জন্য মাছজিদ ফান্ড তৈরি করা। (৮) স্কাউটকে সুসজ্জিত করা এবং বাদ্যযন্ত্র ড্রাম ব্যান্ড প্রভৃতি ক্রয় করা । (৯) কলেজ বার্ষিকী প্রকাশ করা । (১০) আর একটি বিষয় আমি গোপন রাখলাম  তা হলো- ছাত্রী ভর্তি করা।এ জন্য যে এ নিয়ে হৈ চৈ হতে পারে।


বাইওলজি বিষয় খোলা
--------------------
আল্লাহ ভরসা করে কাজ শুরু করলাম । অর্থ সংস্থাপনের ব্যাপারটি মাথায় ছিলো। আমি অভিজ্ঞতা থেকে জানি কাজ শুরু করলে অর্থের আভাব হয় না। তবে কাজ কোনটাই একেবারে সহজ সাধ্য ছিলো না। সবই ব্যয়সাধ্য। প্রথমেই  বাইলজি বা জীববিজ্ঞান খোলার ব্যবস্থা নেয়া হলো। স্কুল  শাখার সিনিয়র শিক্ষক জাহিদ সাহেবকে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে গেলাম। জাহিদ সাহেব ছিলেন একজন উৎসাহী ও কর্মঠ ব্যক্তি। তিনি সবসময় আমাকে উৎসাহ দিতেন। মন্ত্রনালয়ে গিয়ে হতাশ হলাম। বাইওলজির জন্য যে আবেদন করা হয়েছিলো তার কোন ফাইল পাওয়া গেল না। অনেক ঘাটাঘাটির পর এতটুকু জানা গেলো পুরানো ফাইলের সাথে এ ফাইল হয়ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সহকারী সিনিয়র সচিবের সাথে কথা বলে অনেক দেন দরবার করে ফাইলকে পুনর্জীবিত করার ব্যবস্থা করা গেল। সচিব সাাহেবকে অনেক আবেদন নিবেদন জানানোর পর তিনি অল্প সময়য়ের মধ্যে বাইওলজি খোলার আশ্বাস দিলেন। অবশেষে আমরা সফল হলাম। এক মাসের মধ্যে বাইওলোজি খোলার প্রজ্ঞাপন পাওয়া গেলো। এর পর উক্ত বিষয়ে ছয়টি নতুন পদ তৈরির ঘোষনা হলো। জুওলজিতে তিনটি বোটানিতে তিনটি পদ। একজন করে সহকারী অধ্যাপক, দুজন করে প্রভাষক, দুজন করে পরিদর্শক। পরবর্তীতে ভর্তির জন্য বাইওলজিতে ভর্তি  পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হলো। তৈরি পদগুলোর জন্য ডিজির সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন কলেজ থেকে ইচ্ছুক শিক্ষকগনকে বদলি করে আনা হলো।

এইচ এস সি ও এস এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র ফিরিয়ে আনা
----------------------------------------------
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এক কনফারেন্সে আমন্ত্রন পেলাম। ভাবলাম এই সুযোগে পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যাপারে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলা যাবে। কনফারেন্স শেষে চেয়ারম্যানের সাথে পরীক্ষাকেন্দ্র নিয়ে কথা বললাম। কেন্দ্র ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানালাম। চেয়ারম্যান সাহেবের রাগ তখনো পড়েনি। তিনি বার বার তার ছাত্র প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব সাইদুর রহমান এর কথা বলছিলেন। জনালাম- তিনি বদলি হয়ে চলে গেছেন। দেখলাম তার রাগ একটু কমেছে। তিনি অবশেষে আমার অনুরোধ রাখলেন। কেন্দ্র ফিরিয়ে দিতে সম্মত হলেন । আবার সব পরীক্ষা কেন্দ্র ফিরে এলো। 

নিম্ন মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষা কেন্দ্র
----------------------------
এরপর নিম্ন মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষা কেন্দ্র যোগ হলো। এর আগে উপজেলা ভিত্তিক কোন নিম্ন মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষা কেন্দ্র ছিলো না । রাজশাহী থেকে স্কুল শাখার ডিজি আমাকে টেলিফোনে জানালেন- আপনি নিম্ন মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষা কেন্দ্র চালাতে পারবেন? আমি রাজি হলাম। তিনি বললেন এ পরীক্ষা কেন্দ্রের ব্যাপারে ক্যান্ট পাবলিক স্কুল উঠে পড়ে লেগেছে। আমি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করার ভার দিয়েছি। আপনি সংঙ্গে থাকবেন। তিনি যে প্রতিষ্ঠান উপযুক্ত মনে করবেন সেখানেই কেন্দ্র দেয়া হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে শেষে টেকনিকাল কলেজ কে কেন্দ্রের উপযুক্ত বলে রির্পোট দিলেন। টেকনিকাল কলেজে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপিত হলো। দুবছর এ কেন্দ্র পরিচালনা করেছি।

বন্ধ হয়ে থাকা পানি সরবরাহ চালু
------------------------------- 
চৌদ্দ বছর ধরে কলেজ ভবন সহ আবাসিক বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ ছিলো। পানির মটর সহ পাইপ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কারখানা শিক্ষকদের সহায়তায় নতুন মটর সংযোগ করে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ভবন ও বসবাড়িতে পানি সরবরাহ সম্ভব হয়েছিলো।

কলেজের মূল ভবনের সংরক্ষনের কাজসহ বিভিন্ন সংস্কার মূলক কাজ
------------------------------------------------------
উক্ত কাজ সমূহের পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য জনাব জাহিদ সহ শিক্ষা দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ সাহেবের কাছে গেলাম। কলেজের উক্ত কাজসমূহের কথা তাকে জানালাম। তিনি কলেজ ভবনের অসুবিধা সমূহ লিখে দিতে বললেন। লিখিত বিবরন পেয়ে তৎখনাত তিনি ডিও লেটার সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে প্রেরন করলেন। চিঠিতে জানতে চাইলেন কেন দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ ভবনের সংরক্ষনের কাজ করা হয়নি আর অসমাপ্ত কাজ কেন শেষ হয়নি। আমি অসমাপ্ত কাজের ছবি তুলে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় পাঠিয়ে ছিলাম। ছাপা হওয়ার পর প্রকৌশল কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছিলো। দ্রুত কলেজের য়াবতীয় অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়েছিলো। 

ছাত্রী ভর্তি
---------- 
প্রথমে স্কুল শাখার  জেষ্ঠ শিক্ষক জনাব হাবিবুর রহমানের সাথে কলেজের উভয় শাখায় ছাত্রী ভর্তির বিষয়টি আলোচনা করলাম। তিনি এ ব্যাপারে  একবাক্যে সম্মতি জানালেন এবং যাবতীয় সহায়তার অশ্বাস দিলেন। এরপর আরো কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলোচনা করলাম। তাদের দু একজন ছাড়া সবাই অমত পোষন করলেন। জানাজানি হওয়ার পর ছাত্রী ভর্তির ব্যাপরটি বীতিমত বিতর্কিত হয়ে উঠলো। আমি সব শিক্ষদের এক এক করে ডেকে এনে আলোচনা করে বোঝাতে সক্ষম হলাম। এ ব্যাপারে সব শিক্ষক ও কর্মচারীেেদর আলোচনায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। কিন্তু কলেজের বাইরে সৈয়দপুর শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রী ভর্তির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে গেলো। বিশেষ করে তুলশিরাম বালিকা বিদ্যালয়। মনে হচ্ছিলো সৈয়দপুর শহরবাসী যেন এক জোট হয়ে সৈয়দপুর সরকারী কলেজে ছাত্র ভর্তির বিরোধিতায় নেমেছে। তারা স্থানীয় প্রশসনসহ শিক্ষা বিভাগের উর্ধতন  কমকর্তার কাছে আপত্তি জানিয়ে আবেদন নিবেদন শুরু করে দিলো। সব কথা আমি রাজশাহী শিক্ষা বিভাগের স্কুল শাখার ডিডি মজুমদার সাহেবকে জানালাম। তিনিি আগে থেকে ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে  সম্মত ছিলেন। বিরোধীতা করছিলেন ইউএনও সাহেব। ডিডি সাহেব সৈয়দপুরে এলেন এবং ইউএনও কার্যালয়ে সৈয়দপুরের সব স্কুল কলেজের প্রধানদের ডাকলেন আলোচনার জন্য। আলোচনা সভায় আমার যুক্তি তুলে ধরলাম-  সৈয়দপুরে সরকারী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। কাজেই  এ এলাকার  মেয়েদের সৈয়দপুর সরকারী কারিগরী মহাবিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার রয়েছে। আপনারা কেউই তা খর্ব করতে পারেন না। বাক বিতন্ডা ও অনেক বিরোধীতার মুখে ডিডি সাহেব ভর্তির পক্ষে রায় দিলেন। শেষে  বিরোধীতাকারীরা অগত্যা তা মেনে নিলেন। তবে আমার উপাধি দিলেন গুন্ডা প্রিন্সিপাল। ছাত্রী ভর্তি শুরু হলে প্রথম বছরে অনেক মেধাবী ছাত্রী ভর্তি হয়েছিলো।

মেয়ে ভর্তির পর তার কমনরুম সহ লেট্রিন ও বাথরুম তৈরি প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। লেট্রিন তৈরির ব্যাপারে প্রকৌশল বিভাগ বাদ সাধলো নানা অজুহাত তুলে। তার মধ্যে কলেজ ভবনের দেয়ালের পাশে গর্ত (সেপটি ট্যাংকের জন্য) করা যাবে না। কৌশলের আশ্রয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত বাথরুম লেট্রিন তৈরি করা সম্ভব হলো।

কলেজ মিলনায়তন সম্প্রসারন ও ষ্টেজ তৈরি
--------------------------------------- 
টেকনিকাল কলেজের একটি ছোট মিলনায়তন ছিলো। কলেজে ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ছোট মিলনায়তন কক্ষে কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছিলো না। শিক্ষকগনের দাবী ছিলো মিলনায়তন বড় করতে হবে। কাজটি সহজ ছিলো না। অনেক অর্থ ব্যয় করে মিলনায়তন সম্প্রসারন কার সম্ভব হলো। তার সাথে একটি বড় ষ্টেজ তৈরি করা হলো। একজন কন্ট্রাকটর এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন।

বয়েজস্কাউট
---------- 
বায়েজকাউটকে সুসজ্জিত করা হলো। তার জন্য বাদ্যযন্ত্রসহ ব্যান্ড ক্রয়করে আনা হলো। এসময় প্রথম ব্যান্ডে তালে তালে প্রথম কুচকাওয়াজ প্রদর্শিত হলো।

কলেজ মসজিদ
------------- 
কলেজে কোন মসজিদ ছিলো না। শিক্ষকগনের সাথে পরামর্শ ক্রমে মসজিদ নির্মানের জন্য কলেজে একটি মসজিদ ফান্ড তৈরী ব্যবস্থা নেয়া হলো। ছাত্র ছাত্রীর উপর মসজিদ ফি ধার্য করা হলো। পরবর্তীতে এ ফান্ড ব্যবহার করে মসজিদ নির্মন করা সম্ভব হয়েছে।

কলেজ বার্ষিকী
------------- 
টেকনিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কোন কলেজ বার্ষিকী প্রকাশিত হয়নি। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম সৈয়দপুর কারিকারিগরী মহাবিদ্যালয় বার্ষিকী-৮৩ প্রকাশিত হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলো সিরাজুল ইসলাম।

প্রথম নাটক মঞ্চস্থ
---------------- 
আমার লেখা পরীক্ষা উৎসব বা হার্টফেল প্রহসনমূলক নাটক টেকনিকাল কলেজে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড: গোলাম সাকলায়েন। 

আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকালে অনেক স্মৃতির ভিড়ে এসে দাড়ায় সৈয়দপুর টেকনিকাল কলেজ ও অনেক প্রিয় চেনা মুখ । এখানে আমার জীবনের বেশ কিছু সময় কেটেছে। যা কিছু করেছি কর্তব্য মনে করে করেছি। কোন যশ খ্যাতি বা বাহাদুরি পাবার জন্য নয়। টেকনিকাল কলেজ একটি উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হোক এটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। টেকনিকাল কলেজের সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি।

#


প্রফেসর মুহাম্মদ মনসূর উর রহমান
প্রাক্তন ভার প্রাপ্ত অধ্যক্ষ,
সৈয়দপুর সরকারী কারিগরি মহাবিদ্যালয়

Latest posts