কন্ঠশিল্পী আইয়ুব আলী'র স্মৃতিচারণ
vào
25 Jun, 2019
কন্ঠশিল্পী আইয়ুব আলী'র স্মৃতিচারণ
#############
আমার
প্রিয় চেনাজন হারিয়ে গেলো। বয়স যতই হোক আমাকে না বলে সে কোথাও যায়না। আমি মরহুম আইয়ুব আলীকে নিয়ে
ভাবছি....। এইতো
সেদিনের কথা। যেন
আমার পাশে বসে আজো দিন-রাত কথা বলছে।
-চাজী এই গুল মাখাটা
পছন্দের না।
-আচ্ছা বাবাজী এইটুকু
লাগিয়ে এখনকার মত নয়।
-তার মানে পরে আবার লাগাবেন।
-তার মানে পরে আবার লাগাবেন।
-হ্যঁ.....হ্যঁ.....ঞঁ....
(ফোকলা হাসি)।
কন্ঠশিল্পী আইয়ুব আলী, শেষ জীবনে ভাল অভিনয় করছিলেন। যতগুলো অভিনয়ের কাজ করেছেন সব এই
ময়ূরকণ্ঠীর কাজগুলোতে। সে ময়ূরকণ্ঠীর একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। সকল ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে দাদু
দাদু বলে অস্থির করে তুলতো। যত নালিশ তাদের ওই দাদুর কাছে। তারপর তাদের দাদু আমার আইয়ুব চাজী
আমার মেজাজ দেখে বলতো এবং সমাধান করে দিতেন। এই তো সেদিনের কথা। অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা যারা বাহিরে
আছে নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত তারা কি সবাই জানে তাদের দাদু নেই। এই জগৎ থেকে চিরতরে চলে গেছে অভিমানে। তাঁর মৃত্যুর কয়েকমাস আমি খুবেই
বাহিরে ব্যস্ত থাকাতে অফিসে বসতে পারছিলাম না তখন নাকি অসুস্থ শরীর নিয়ে দু’বার করে এসে ফিরে যেতেন। যখন শুনতাম খারাপ লাগতো কেন জানি
এই ফোঁকলা,
হাঁসিখুশি পাঞ্জাবী পড়া, পানখাদক লোকটাকে মোবাইলে রিং
দিতাম।
অনেক সময় তিনি বুঝতে
পারতেন না। পরে
দেখা হলে আচ্ছা করে বোকা দিতাম। আর বলতাম মরনের খবরটাও পাবনা। সত্যি তাই তিনি যে এত অসুস্থ হয়ে
হাসপাতাল থেকে ঘুরে এসে বাড়িতে শয্যাষায়ী কেউ বলেনি। সকলের ধারনা আমি ও সবার আগে খবর
পাব।
শুনে সোহান (বাঁশি
বাদক) কে নিয়ে বাড়িতে গেলে। হাঁ হয়ে শুয়ে, দেখছেনা। প্রচন্ড জ্বর। তার মেয়ে হাতে পায়ে তেল মাখাছে। ছেলের বউ পাশে বসে। কি তরতাজা ফুরফুরে মেজাজের লোকটা
এই অবস্থা। তার
বড় ছেলে অহিদুল মাষ্টারকে একটু জোরেই বললাম। খবরটা জন্য। কেন বলেছিলাম জানিনা। (হয়তো মায়ের চেয়ে মাষির দরদ বেশী)।
-একটু কথা বলেন চাজী, এই দেখেন আমি হাবিব।
কতবার মাথায় হাত দিয়ে
ডাকলাম চোখ বন্ধ করে হঠাৎ এক দুই বার কাঁপনি দীর্ঘশ্বাস
ছাড়লেন। উপস্থিত
জনরা বললেন আপনার চাজীর জ্বর হলে অজ্ঞান হয়ে যান। আমি বুঝলাম আর দেখা ও কথা হবে না। দুটা ছবি তুলে। শেষ বিদায় সেইটি ছিল। আশার সময় বললাম তিনি স্বচেতন হলে
আমাকে একটু মোবাইলে খবর দিয়েন। কেউ দেয়নি। তারপর ৫- ৬ দিন পর ভোর-সকালে চাজীর বড় ছেলে অহিদুলের মোবাইল
রিং.........। ২৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার ভোর রাতে
বাধ্যর্ক জনিত কারনে ইত্তেকাল করেছেন (ইন্না .............. রাজেউন) মৃত্যুকালে
তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর । মৃত্যুকালে স্ত্রী ২ ছেলে ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রহী রেখে গেছেন। তিনি পার্বতীপুরের প্রথম বেতার
শিল্পী। স্বাধীনতা
উত্তর পুর্ব আইয়ুব আলী লোকজ গানের সুরকার গীতিকার ও উঁচু মানের কন্ঠ শিল্পী ছিলেন। সুদীর্ঘ সময় রংপুর বেতারে গান
গেয়েছেন তিনি, তার
মৃত্যুতে পার্বতীপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি শুন্যতার সৃষ্টি হলো। তিনি জীবৎদশায়
ভারতের প্রখ্যাত গজল গায়ক চন্দন দাশের সাথে পার্বতীপুরসহ দেশের নানা অঞ্চলে গান
গেয়েছেন । অসংখ্য
সাংস্কৃতিক সংগঠনে তার উদার বিচরন ছিল। তার
জানাযায় পার্বতীপুরের সাংস্কৃতিক মনা ব্যক্তি সহ সকল স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তার শোকসন্তত্ব পরিবারের প্রতি
পার্বতীপুরের সকল স্তরের মানুষ সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
এই সাংস্কৃতিক জগতে তাকে অবহেলা এবং অমুল্যায় করেছে বিশেষ করে
পার্বতীপুরবাসী’র
শিল্পীবৃন্দ। আমি
এদের প্রত্যেকে ভালভাবে চিনি। এই কারণে আমার অফিসে (ময়ূরকণ্ঠী) একদিন তিনি তার আবেগের কথা বলতে
গিয়ে আমার হাত ধরে কেঁদেছিলেন। এই দৃশ্যটা আজ-কাল খুব বেশী করে ব্যাথিত করে তুলছে আমাকে। এই পল্লী শহরগুলোর মানুষগুলো এত
খারাপ।
যে খারাপ একটা সমাজের
সাংস্কুতিক অঙ্গনটাকে একেবারি নষ্ট করে দিচ্ছে। নিজেরাও কিছু করতে পারছেনা, কাউকে কাজ করতে দিচ্ছেনা শুধু তাই
নয়...।
একথাতেই তিনি বলেছিলেন। হাবিব বাবাজী তোমার উপর হামলা
এসেছিল। তুমি
দেখে ওরা ভয়ে ল্যাজ গুটিয়ে রেখেছে। তুমি সংগ্রাম করা মানুষ। প্রতিভাবান মানুষদের জন্য সংগ্রাম করছো। কিন্তু এই শহর থেকে অনেক
প্রতিভাবান মানুষ তারা এখান থেকে রাগে অভিমানে ােভে একেবারি চলে গেছে, এখানকার নামও নিতে চায়না। অভিশ্বপ্ত আমাদের অঞ্চল। তুমি বাবাজি সাবধানে থাকবে। আমার বিশ্বাস তুমিই পারবে এই
পার্বতীপুরের কলঙ্ক মুছাতে। কারন এতদিনে আমি বুঝতে পেরেছি যা করছো পার্বতীপুরের মানুষ সবকিছু
তোমার কাছে নতুন দেখছে। যা তাদের কল্পনা শক্তিতে আসেনা সেটি করে দেখাছো। তাদের কিছু নেই মন্তব্য ছাড়া। তোমাকে ইর্শা করে। এই জন্য যে তোমাকে ভয় পায়। কখনো দেখলামনা তোমার সামনে কেউ
কিছু মন্তব্য করতে পেরেছে। তাদের সেই সাহস নেই। তুমি পারবে এদেরকে সাহেস্তা করতে। আমার দাবী এই অঙ্গনটাকে বাঁচাও। পার্বতীপুরকে সুষ্ট সাংস্কৃতিক
ধারা পরিচালনা করা উদ্দ্যেগ নাও। ওদিকে তুহিন ও চেষ্টা চালাছে তাকেও কোনঠাসা করে রাখছে। যারা জানেনা তারাই এসব করছে। ইতোমধ্যে তুমি কিছু ব্যক্তিদেরকে
চি˝িত করেছো। আরো আছে খুঁজো...। এরা সাংস্কৃতির রাজাকার। আমরাতো আর পারবো না..। আর ক’দিন বাঁচবো। তোমাদের হাতে আমাদের সম্মান। আমি মৃত্যু পর্যন্ত তোমার কাছে
থাকবো বাবাজী দোয়া করো।
আমি কথাগুলো নিয়ে কি
করে থাকি,
সারাদিন-রাত ধরে ভাবি, সত্যি এই অঞ্চলে শুধু নয় আমাদের
দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটার অবস্থা কে বা কারা সঠিক দিকে এগিয়ে প্রতিভাবান
ব্যক্তিদের মুল্যায়ন করবে? যারা
পরিচালনা করছে তারাইতো হতভাগ্য পেটুক। তাদের কাছে কি আশা করা যায়। এই গুণি শিল্পীদের একটি আশাও কি পুরণের মতা নেই তাদের
মৃত্যুর আগে...........। তবে আইয়ুব চাজী আপনাকে সেদিন যে কথা দিয়েছি আজ ফেজবুক বন্ধুদের ও
বলছি যখন এই পথে আছি। আমিও দেখবো মানুষ কত আঘাত করতে পারে। আমি শুধু দোয়া চাই।
::::::::::::
হাবিব ইফতেখার
ময়ূরকণ্ঠী পরিচালক
0 Comments