-->

(দিনাজপুরে পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা - মোজাহিদ ইফতেখার হাবিব

একটি ভোরের কবিতায় সাতটি জ্বলন্ত দীর্ঘশ্বাস
(দিনাজপুরে পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা )

ওরা চোখ তুলে তাকালো,
ক্লান্ত ভোরাচ্ছন্ন ষোড়শী কবিতার দিকে।
স্বাক্ষর কর্তব্য পরায়ণ খাকী পিক আপ ভ্যানের
সম্পাদক মন্ডলীরা অজ্ঞাত কবিতাকে ব্যবচ্ছেদ করলো
বাজেট বিশেষ
ছন্দ থেমে গেল অনুভূতির।
কবিতার রক্তাক্ত হৃৎপিন্ড বেরিয়ে
ফিরে এলো দশমাইল রচনাবলীর কাছে
একটি প্রতিবাদী লাশ হয়ে।
এখন ধর্ষিতা কবিতার লাশ দ্বীপ্ত শিখরে।
বোধ্যগম্য উত্তাল ঢেউ হেঁটে এলো।
যৌথ সম্পাদনায় রহস্য সাজালো
ষোড়শী, নিশিথী রাতের কবিতা।
কবির কলম স্তব্ধ!
রক্তের তাপে অনুভূতির আগুণ লাগল জাগতিক দৃষ্টিতে।

সৃষ্ট কবিরা অজ্ঞাত কবিতার নামকরণ করলেন
২৪শে আগষ্ট নির্বাচিত ভোরের কবিতা।
কবিতার মৃত্যুর পর কবিদের নাম হলো জনতার মিছিল;
জন্ম হলো প্রতিবাদ
চেনা জগৎ ছুঁয়ে নোটিশ টাঙ্গালো
উপলব্ধির কঠিন শপথ;
গজালো জন্মশাসনের পিঠের বুলি।
ফেটে গেল রাজপথ,
চেনা শহর পাল্টে হলো অচেনা ইঙ্গিত,
ক্রোধিত শোক প্রদর্শিত হলে লাগল বিচারের দাবীতে।
নিজস্ব গতি একত্রিত হলো,
বিশ্বাস শাসিত ঝড়ের মেঘ।
এমন খেলা, কে খেলতে পারে
বোঝা কঠিন।
চারিদিক অশুভ আল্পনা, জল্পনা।
যদি ব্যর্থ হয়-
তবে জনতার মিছিল দাঁড়াবে কোথায়-?
তবু জিম্মি নিজ প্রতিবাদ।
সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত-
কবিতার ক্যানভাস ফেটে যাচ্ছে বারবার
খাকী সম্পাদকরা ব্যতিব্যস্ত।

২৭ শে আগষ্ট,
বাতাসের গায়ে ধ্বনিত হলো কার্ফ্যূ
একমাত্রিক বন্ধনে ক্রুব্ধ জনতা
প্রতিবাদের অগ্নিস্রোতে ভেঙ্গে ফেললো কার্ফ্যুর মূলমন্ত্র।
কলো পিচ বেয়ে এগিয়ে চললো শপথ সঙ্গীত।
ওরা আসছে স্বৈরাচারীর লাইসেন্স পদক্ষেপে
ওরা আসছে, ওরা আসছে ।
বুটের আওয়াজ, খলচোখের রক্তাক্ত দৃষ্টি,
হাতে প্রস্তুত গোলামী অস্ত্র।
চারিদিক ছমঝমে মেঘের পরশ
তবু অগ্র পথিক দল প্রশ্নের মুখমুখিতে-
গর্জে ওঠল আকাশের সমস্ত বাতাস
মেঘ খসে পড়ল টিয়ার গ্যাসে।
ট্রিগার টিপে চলল পৈশাচিক আঙ্গুল
ভ্যাপসা গরমে খইফুটে গেল
উত্তপ্ত দিনাজপুর পথের জনতার মিছিলে।
ধোঁয়াচ্ছন্ন বাতাস মাড়িয়ে
সাতটি তরতাজা হৃৎপিন্ড
প্রজন্মের কবিতার পতাকায় প্রভাবিত হলো।
যে শিশু দেখেনি কখনো যুদ্ধ
যে যুবক রাজপথে শুনেনি গুলির শব্দ
টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝালো কাঁকুতি
যে নববধু ভাবেনি রিক্্রা নিয়ে ফিরবে না মেহনতি স্বামী
যে বাবা মেয়ের জন্মদিনে অভিবাদন জানালো মৃত্যু বার্ষিকী'তে
যে মা বুক ফেটে এখন মৃত্যুর কোলে-
খোকাকে না পাওয়ার জন্য
যে প্রিয়তমা প্রেমিকের লাশের জন্য সূর্যকে দিল যৌবন-!
আজ কি করে থেমে থাকা যায়-?
থাকনি নান্নু তুমি ও,
কিশোরী প্রতিবাদে ওরা তোমাকে ধরে
আছাড় দিয়ে বুটের আঘাতে প্রাণ কেড়ে নিল,
তোমাকে হত্যা করে মৃতদেহ ভ্যানের মাচায়
লটকে ঘুরেছে শহরময়।

ধিক্কার, ধিক্কার - জাতির মানচিত্র
এ ক্রোধ রাখবো স্বাধীনতার কোন পকেটে?
ধারী তান্ত্রিকদের বলতে চাই,
আমি কার কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি।

হে জনতা-,
এভাবে কি প্রজন্ম নিধন চলতে থাকবে?
এভাবে প্রজন্মের দাবীতে স্বাধীন রাংলার বুকে
রক্ত দিয়ে আরো লিখতে হবে স্বাধীত যুদ্ধের কথা।

যদি তাই হয়-
এইভাবে প্রজন্ম বৈপ্লবিক উৎসর্গে
রক্তে লাল করে আকাশ ডোবাবে
আর স্বীকৃতি দেবে-
একটি ভোরের কবিতায় খসে পড়া
সাতটি জ্বলন্ত প্রতিবাদী দীর্ঘশ্বাস ॥
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::: 

Latest posts